ব্লু লাইনে স্টেশন হবে ট্রেনের মতোই ঠান্ডা

কলকাতা: ঘেমে–নেয়ে যাত্রার দিন শেষ হতে চলেছে কলকাতা মেট্রোয় (Kolkata Metro Blue Line)। ভূগর্ভস্থ ব্লু লাইনের স্টেশন ও সুড়ঙ্গজুড়ে বসানো হচ্ছে অত্যাধুনিক টানেল ভেন্টিলেশন ও স্টেশন কুলিং সিস্টেম। নিউ গড়িয়া থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত বিস্তৃত এই ব্যস্ত মেট্রো করিডোরের পুরনো অবকাঠামো এবার প্রথমবার বড়সড় প্রযুক্তিগত রদবদলের মুখে পড়ছে। কর্তৃপক্ষের আশা, এই প্রকল্প শেষ হলে আন্তর্জাতিক মানের ঠান্ডা, আরামদায়ক এবং নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত হবে যাত্রীদের জন্য।

Advertisements

মেট্রো রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ব্লু লাইন জুড়ে তৈরি হবে মোট সাতটি নতুন ট্র্যাকশন সাব-স্টেশন। কালীঘাট, নেতাজি ভবন, ময়দান, এসপ্ল্যানেড, এম.জি. রোড, শোভাবাজার সুতানুটি এবং বেলগাছিয়া–শ্যামবাজারের মাঝামাঝি এলাকায় এই আধুনিক সাব-স্টেশনগুলি গড়ে উঠবে। সেই সঙ্গে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং অগ্নি-নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে চাঁদনি চক ও গীতাঞ্জলি স্টেশনে আরও দুটি অতিরিক্ত সাব-স্টেশন তৈরি করা হবে।

   

আগে যখন নন-এসি রেক চলত, তখন সুড়ঙ্গ ঠান্ডা রাখার দায়িত্ব পালন করত সাধারণ বায়ু চলাচল ব্যবস্থা। কিন্তু স্টেশনে যাত্রীদের গরমে অস্বস্তি ছিল চরমে। এখন সমস্ত রেকই যেহেতু সম্পূর্ণ এয়ার-কন্ডিশন্ড, তাই পুরো টানেল সিস্টেমকে আরও উন্নত প্রযুক্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সুড়ঙ্গের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, তাজা বায়ু চলাচল, ধোঁয়া বেরোনো সবকিছু হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

ব্লু লাইনের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গগুলিতে বর্তমানে ব্যবহৃত ১১০ কিলোওয়াটের সেন্ট্রিফিউগাল ফ্যান ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। পুরনো এই ফ্যানগুলোকেই এবার বদলে ফেলা হচ্ছে দিকনির্দেশিত আধুনিক অ্যাক্সিয়াল ফ্যান দিয়ে। এই ফ্যানগুলি ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম বাতাস সামলাতে পারে, এবং আগুন লাগলে ধোঁয়া বের করে দিতে সক্ষম। ধোঁয়া, তাপমাত্রা বা CO₂ মাত্রা বৃদ্ধি পেলেই এই ফ্যান স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে যা যাত্রী নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখবে।

Advertisements

এই আধুনিক টানেল ভেন্টিলেশন সিস্টেম এবং স্টেশন কুলিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছে একটি জাপানি কোম্পানির ভারতীয় সহযোগী সংস্থা। সিঙ্গাপুর মেট্রোর শতাধিক ভূগর্ভস্থ স্টেশনে ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করেই কলকাতা মেট্রোর জন্য নতুন পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।

সম্প্রতি জাপানি ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল যতীন দাস পার্ক স্টেশনের এয়ার-কন্ডিশনিং প্ল্যান্ট এবং অন্যান্য সংলগ্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত পরামর্শের ভিত্তিতেই ব্লু লাইনের সম্পূর্ণ কুলিং আপগ্রেডের রূপরেখা নির্ধারিত হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষের দাবি, এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে স্টেশন ও সুড়ঙ্গ উভয় জায়গাতেই থাকবে নিয়ন্ত্রিত ঠান্ডা পরিবেশ। গরমকালে যাত্রীদের আর অস্বস্তিকর পরিবেশে দাঁড়াতে হবে না, বরং ট্রেন এবং স্টেশনের তাপমাত্রা প্রায় সমান থাকবে। একই সঙ্গে অগ্নি-নিরাপত্তা, ধোঁয়া নিষ্কাশন ব্যবস্থা, এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের গুণগত মানও উন্নত হবে বহু গুণ।