কলকাতা: দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত মেট্রোর ব্লু লাইন (Kolkata Metro Blue Line) এখন পুরোপুরি নতুন রূপে সেজে উঠতে চলেছে। যাত্রীদের আরও আরামদায়ক অভিজ্ঞতা দিতে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ শুরু করেছে প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণের এক বড় উদ্যোগ। এবার বদলে যাচ্ছে প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন ডিসপ্লে সিস্টেম ও অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেম — যা প্রতিদিনের যাত্রাকে করবে আরও সুশৃঙ্খল ও পরিষ্কার।
মাসখানেক আগেই মেট্রোর ব্লু লাইনের সমস্ত স্টেশনে হঠাৎই অন্ধকার হয়ে যায় ডিসপ্লে বোর্ড। ট্রেনের সময়সারণি দেখা বন্ধ হয়ে যায়, ফলে নিত্যযাত্রীদের বিপাকে পড়তে হয়। অভিযোগ ওঠে, প্রতিদিনের বিশৃঙ্খলা আড়াল করতেই বোর্ড বন্ধ করা হয়েছে। তবে পরে জানা যায়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই সম্পূর্ণ সিস্টেম বিকল হয়ে পড়েছিল। কিছুদিন পর তা আংশিকভাবে চালু করা হলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
ফলে মেট্রো কর্তৃপক্ষ এবার স্থির করেছে, পুরনো সব ডিসপ্লে বোর্ডের পরিবর্তে নতুন প্রজন্মের ডিজিটাল ইনফরমেশন ডিসপ্লে বোর্ড বসানো হবে। এই নতুন বোর্ডগুলোতে থাকবে উন্নত লেড স্ক্রিন, রিয়েল-টাইম আপডেট এবং পরিষ্কার দৃশ্যমানতা। শুধু প্ল্যাটফর্ম নয়, স্টেশনে প্রবেশদ্বার, টিকিট কাউন্টার এবং এস্কেলেটর সংলগ্ন অংশেও বসানো হবে নতুন ডিসপ্লে।
এছাড়াও, মেট্রোর পুরনো অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেম নিয়ে যাত্রীদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। বহুবার অভিযোগ উঠেছে, ঘোষণার শব্দ এতটাই বিকৃত ও অস্পষ্ট যে তা বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে। বিশেষত এসপ্ল্যানেড, কবি সুভাষ, দমদম, নোয়াপাড়া বা দক্ষিণেশ্বরের মতো ব্যস্ত স্টেশনে বারবার ঘোষণার প্রয়োজন হলেও পুরনো সিস্টেমে তা কার্যকর হচ্ছিল না।
তাই এবার সম্পূর্ণ নতুন ডিজিটাল অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেম বসানো হচ্ছে, যাতে থাকবে আধুনিক অডিও প্রসেসিং প্রযুক্তি, স্পষ্ট ভয়েস আউটপুট এবং স্বয়ংক্রিয় সাউন্ড ব্যালান্সিং ব্যবস্থা। ইংরেজি ও বাংলায় ঘোষণাগুলি আরও পরিষ্কারভাবে শোনা যাবে।
মেট্রো সূত্রে জানা গেছে, এই পুরো আধুনিকীকরণ প্রকল্পে খরচ হবে প্রায় ১৬.১৪ কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং কাজ শুরু হবে খুব শিগগিরই। প্রথম পর্যায়ে দক্ষিণেশ্বর, এসপ্ল্যানেড, কবি সুভাষ ও নোয়াপাড়া স্টেশনে নতুন ডিসপ্লে ও ঘোষণার ব্যবস্থা বসানো হবে। পরে ধাপে ধাপে বাকি স্টেশনগুলোতেও তা চালু করা হবে।
মেট্রো রেলের এক ঊর্ধ্বতন আধিকারিক জানান, “যাত্রীদের আরাম ও নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। তাই পুরনো সিস্টেম বদলে আধুনিক প্রযুক্তি আনা হচ্ছে। এতে যাত্রীরা সময়, ট্রেনের গতি এবং জরুরি তথ্য দ্রুত জানতে পারবেন।”
যাত্রীদের মতে, এই সিদ্ধান্ত অনেক দেরিতে হলেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রতিদিনের যাত্রার সময় তারা যে অসুবিধার মুখোমুখি হতেন, তা এবার অনেকটাই দূর হবে।