কলকাতা: মুকুল রায়ের (Mukul Roy) বিধায়ক পদ খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত জানাল আদালত। বৃহস্পতিবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। এর ফলে রাজ্যের রাজনীতিতে ফের এক বড় মোড় ঘুরল।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে জয়ী হন মুকুল রায়। একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনের মূল স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁকে বলা হত তৃণমূলের ‘চাণক্য’। কিন্তু ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে তিনি দলত্যাগ করে যোগ দেন বিজেপিতে। সেই সময় বিজেপি তাঁকে রাজ্যের অন্যতম মুখ্য কৌশলবিদ হিসেবে ব্যবহার করেছিল।
২০২১ সালে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়ে বিধায়ক হলেও, কয়েক মাসের মধ্যেই তৃণমূলে ফিরে আসেন তিনি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরার পর থেকেই তাঁর বিধায়ক পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। কারণ, সংবিধানের ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি দল পরিবর্তন করেন, তবে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ হয়।
এই অভিযোগ তুলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু স্পিকার তাঁর আবেদন খারিজ করে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ বহাল রাখেন। শুভেন্দু তখন আদালতের দ্বারস্থ হন।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ শুভেন্দুর সেই মামলায় রায় দেয় মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের পক্ষে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মুকুল রায়ের দলবদল সংবিধান-বিরোধী এবং দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী তাঁর বিধায়ক পদ টিকে না।
এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে ব্যাখ্যা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ তিনি লেখেন, “রাজ্যের ইতিহাসে তো বটেই, সম্ভবত দেশের ইতিহাসেও এই প্রথম এমন রায়।”
In a landmark judgment and the first of its kind in West Bengal (possibly also in India), a Constitutional Court being the Division Bench of the Hon’ble High Court at Calcutta consisting of the Hon’ble Justice Debangsu Basak and the Hon’ble Justice Md. Shabbar Rashidi has…
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) November 13, 2025
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই রায় শুধুমাত্র মুকুল রায়ের ক্ষেত্রেই নয়, ভবিষ্যতে অন্য দলবদলকারী জনপ্রতিনিধিদের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আদালতের ভূমিকা আরও স্পষ্ট হল।
তৃণমূল শিবিরের পক্ষ থেকে এখনও এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক মহলে এখন একটাই প্রশ্ন এই রায়ের পর কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে উপনির্বাচনের সম্ভাবনা কতটা দ্রুত সামনে আসতে পারে।


