DA মামলায় রাজ্যের বড় পদক্ষেপ, জমা পড়ল নয়া হলফনামা

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বর্ধিত মহার্ঘভাতা (ডিএ) (DA) সংক্রান্ত মামলা বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার— টানা তিন দিন এই মামলার…

Hearing of DA Case Scheduled for Next Tuesday

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বর্ধিত মহার্ঘভাতা (ডিএ) (DA) সংক্রান্ত মামলা বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার— টানা তিন দিন এই মামলার শুনানি হয়েছে বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের বেঞ্চে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী মঙ্গলবার নির্ধারিত হয়েছে। তবে সেই শুনানির আগেই রাজ্য সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে ফের একটি পিটিশন জমা দিল সুপ্রিম কোর্টে।

Advertisements

রাজ্যের দাবি
সূত্রের খবর, নতুন পিটিশনে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, ডিএ-র (DA) হার কোনও নির্দিষ্ট সূচক বা সূত্রের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় না। বরং এটি নির্ভর করে রাজ্যের আর্থিক সামর্থ্য এবং রাজস্ব নীতির উপর। রাজ্যের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বাবদ সমস্ত বকেয়া ইতিমধ্যেই মেটানো হয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে কোনও বকেয়া পরিশোধের প্রশ্ন নেই।

Advertisements

আদালতের পূর্ববর্তী পর্যবেক্ষণ
এর আগে শুনানির সময় রাজ্য সরকার ও মামলাকারী কর্মচারী পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আদালত পর্যবেক্ষণ করেছিল, ডিএ সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নয়। যদিও মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, এটি তাঁদের আইনি অধিকার। তাঁদের মতে, ডিএ(DA) নির্ধারণের ক্ষেত্রে নীতি ও প্রথা ভঙ্গ করা হলে কর্মচারীদের বেতন কাঠামোয় বৈষম্য তৈরি হয়, যা আইনি দিক থেকে চ্যালেঞ্জযোগ্য।

বৈষম্যের প্রশ্নে আদালতের কৌতূহল
আদালত এও জানতে চেয়েছিল, অল ইন্ডিয়া কনজ়িউমার প্রাইস ইনডেক্স (AICPI) অনুসারে কি ডিএ নির্ধারিত হয়? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে কেন দিল্লির বঙ্গভবন বা চেন্নাইয়ের ইউথ হস্টেলে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারীরা যে হারে ডিএ পান, রাজ্যে কর্মরত সরকারি কর্মচারীরা সেই হারে ডিএ পান না? এই বৈষম্যের কারণ জানতে চেয়েছে আদালত।

প্রভাব দেশজুড়ে
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, আদালত এই মামলাকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে কারণ এর প্রভাব গোটা দেশেই পড়তে পারে। রাজ্যের পক্ষের যুক্তি যদি আদালত মেনে নেয়, তবে অন্য রাজ্যগুলির ক্ষেত্রেও ডিএ প্রদানের নীতি বদলাতে পারে। অন্যদিকে, যদি মামলাকারী পক্ষের যুক্তি সঠিক বলে প্রমাণিত হয়, তবে কেন্দ্রীয় সূত্র মেনে ডিএ প্রদান বাধ্যতামূলক হতে পারে, যা অনেক রাজ্যের অর্থনৈতিক চাপে প্রভাব ফেলতে পারে।

রাজ্যের অবস্থান বনাম কর্মচারীদের দাবি
রাজ্য সরকারের দাবি, রাজস্ব পরিস্থিতি অনুযায়ী ডিএ-র হার নির্ধারণ করা যুক্তিসঙ্গত এবং বর্তমানে কোনও বকেয়া নেই। অন্যদিকে, কর্মচারী সংগঠনগুলির দাবি, ডিএ-র নির্ধারণে স্বচ্ছ সূত্র থাকা উচিত এবং তা কেন্দ্রীয় সূচক অনুযায়ী হওয়া দরকার। তাঁরা অভিযোগ করছেন, একই রাজ্যের কর্মচারীরা কর্মস্থলভেদে ভিন্ন হারে ডিএ পাচ্ছেন, যা সংবিধানসম্মত নয়।

আগামী শুনানি গুরুত্বপূর্ণ
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, মঙ্গলবারের শুনানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কারণ, এতে আদালত হয়তো রাজ্য সরকারের নতুন পিটিশনের যুক্তি ও প্রমাণ খতিয়ে দেখবে। পাশাপাশি বৈষম্য সংক্রান্ত প্রশ্নে আদালতের স্পষ্ট দিকনির্দেশ আসতে পারে।

সব মিলিয়ে, ডিএ ইস্যু শুধু রাজ্যের কর্মচারীদের নয়, বরং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের কাছে এখন নজরকাড়া বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবারের শুনানি হয়তো এই দীর্ঘস্থায়ী বিতর্কে নতুন দিশা দেখাবে, অথবা লড়াইকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।