হাইকোর্টের রায়: ‘নতুন করে শুনানি নয়’, ধাক্কা মহুয়ার

অর্থের বিনিময়ে লোকসভায় প্রশ্ন তুলেছিলেন কি না—এই মারাত্মক অভিযোগে জর্জরিত কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)  দিল্লি হাইকোর্টে যে আবেদন জানিয়েছিলেন, তা খারিজ করে…

Delhi HC Turns Down Mahua Moitra’s Urgent Bid to Halt Lokpal Inquiry

অর্থের বিনিময়ে লোকসভায় প্রশ্ন তুলেছিলেন কি না—এই মারাত্মক অভিযোগে জর্জরিত কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)  দিল্লি হাইকোর্টে যে আবেদন জানিয়েছিলেন, তা খারিজ করে দিল আদালত। স্বভাবতই এই রায় বড় ধাক্কা তৃণমূল নেত্রীর পক্ষে। অন্যদিকে, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন অভিযোগকারীদের মধ্যে অন্যতম বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।

Advertisements

এই রায় ঘিরে ফের চর্চায় অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন কাণ্ড। আগামী ৬ অক্টোবর এই মামলার শুনানি রয়েছে ভারতের লোকপাল-এর (Lokpal of India) দপ্তরে। সেই শুনানিই যেন না হয়, কিংবা আপাতত স্থগিত থাকে—এই উদ্দেশ্যেই দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মহুয়া মৈত্র। কিন্তু শুক্রবার আদালত জানিয়ে দেয়, তাদের হস্তক্ষেপের কোনও জায়গা নেই এই মুহূর্তে। ফলে নির্ধারিত সময়েই লোকপালের সামনে হাজির হতে হতে হবে মহুয়া মৈত্রকে।

বিজ্ঞাপন

বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে ২০২৩ সালে লোকসভা স্পিকারের কাছে এক বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি ছিল, এক শিল্পগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় মোটা অঙ্কের অর্থ ও সুবিধা গ্রহণ করে, মহুয়া লোকসভায় প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই সংসদীয় নীতি-নৈতিকতা কমিটি একটি তদন্ত শুরু করে এবং পরে লোকপালও বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করে।

নিশিকান্ত দুবে ছাড়াও প্রাক্তন এক আইনি পরামর্শদাতা জয় আনন্দ দে-ও একটি হলফনামা দিয়ে দাবি করেন, তিনি নিজে চাক্ষুষ দেখেছেন যে কীভাবে মহুয়া একটি বড় শিল্পগোষ্ঠীর হয়ে প্রশ্ন পাঠাচ্ছেন সংসদে। এর জেরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয় জাতীয় রাজনীতিতে।

এই গোটা অভিযোগকে শুরু থেকেই ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করে আসছেন মহুয়া মৈত্র। তাঁর মতে, বিজেপি বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতেই এই ধরনের ‘ফেব্রিকেটেড’ অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি লোকসভার নৈতিকতা কমিটিকেও একাধিকবার পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাঁকে রাজনৈতিকভাবে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে।

দিল্লি হাইকোর্ট শুক্রবার জানিয়ে দেয়, লোকপাল একটি সাংবিধানিক সংস্থা এবং তাদের নির্ধারিত কাজ আদালতের হস্তক্ষেপের আওতায় পড়ে না, যতক্ষণ না আইনের কোনও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়। বিচারপতি স্পষ্ট করে বলেন, লোকপালকে নিজের নিয়মে কাজ করতে দিতে হবে। এই পর্যায়ে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

এই রায়ের পরে স্বভাবতই বিজেপি মহুয়া মৈত্রকে আরও চাপে ফেলতে চাইছে। নিশিকান্ত দুবে রায় প্রকাশ্যে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “সত্যের জয় হল। আইন নিজের পথে এগোচ্ছে। এখন দেশের সামনে আসবে সমস্ত কুকর্ম।”

তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য দলীয় সাংসদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। দলের এক মুখপাত্র বলেন, “যারা মানুষের প্রশ্ন তুলে ধরছেন, তাদেরই দমন করতে চাইছে কেন্দ্র। মহুয়া মৈত্রর পাশে আমরা আছি।”

৬ অক্টোবর লোকপালের শুনানির উপর এখন চোখ গোটা দেশের রাজনৈতিক মহলের। যদি অভিযোগের কোনও ভিত্তি প্রমাণিত হয়, তাহলে তা হতে পারে এক সাংসদের রাজনৈতিক কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় ধাক্কা। অন্যদিকে, অভিযোগ খারিজ হলে তা বিজেপির জন্যও বড় ধাক্কা হবে।