HomeWest BengalKolkata Cityরোজগেরে স্ত্রীকে সংসারে আর্থিকভাবে সাহায্যের নির্দেশ হাই কোর্টের

রোজগেরে স্ত্রীকে সংসারে আর্থিকভাবে সাহায্যের নির্দেশ হাই কোর্টের

- Advertisement -

সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) এক তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যে জানিয়ে দিয়েছে, কর্মরত ও শিক্ষিত স্ত্রীকে যদি সংসারে আর্থিক সাহায্য করতে বলা হয়, সেটি কোনওভাবেই ‘নিষ্ঠুরতা’ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্ত এক নির্দিষ্ট মামলার প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেন, যেখানে এক তরুণী তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে ‘নিষ্ঠুরতা’র অভিযোগ আনেন। সেই মামলাটিই শেষ পর্যন্ত খারিজ করে দেন বিচারপতি, এবং তাঁর রায়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তা উঠে আসে।

এই রায়ে বলা হয়, যদি শাশুড়ি বলেন যে ছেলের বউ তার সন্তানের যত্ন নিক বা তাকে সময়মতো দুধ খাওয়াক, অথবা যদি সংসারে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে বলেন—তবে সেটি কোনও অন্যায় নয়। বরং, এটি পরিবারিক দায়িত্বের পরিপ্রেক্ষিতে এক যৌক্তিক প্রত্যাশা।

   

নারী অধিকার বনাম পারিবারিক দায়িত্ব

বর্তমান সময়ে নারী অধিকারের প্রসঙ্গ উঠলেই অনেকেই জোরের সঙ্গে বলেন—নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু যখন দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গা আসে, তখন অনেকেই সেই সমতার ব্যাখ্যায় দ্বৈত নীতি প্রয়োগ করেন। হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ সেই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধেই এক শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে বলে মনে করছেন আইনজীবী ও সমাজ বিশ্লেষকরা।

এখানে ‘অর্থনৈতিক সমানুভূতির’ বিষয়টি বিশেষভাবে উঠে এসেছে। যদি একজন নারী শিক্ষিত হন, আয় করেন, তাহলে সংসারের অভ্যন্তরেও তাঁর কিছু দায়িত্ব থাকা উচিত—এটি কেবল সামাজিক নয়, বরং নৈতিক বিবেচনাতেও যুক্তিযুক্ত।

স্বামীর একার দায়িত্ব নয় সংসার চালানো

দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সমাজে সংসার চালানোর দায়িত্ব পুরুষের ওপরই বর্তেছে। কিন্তু বর্তমান যুগে, যেখানে নারীরা শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে এগোচ্ছেন, সেখানে সংসারে শুধু পুরুষই রোজগার করবেন—এই ধারণাটি আজও টিকিয়ে রাখা ন্যায়সঙ্গত নয়।

হাইকোর্টের(Calcutta High Court) রায়ে এই দৃষ্টিভঙ্গিই তুলে ধরা হয়েছে। স্ত্রী যদি উপার্জন করেন, তাহলে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে সংসার চালানো তাঁর নৈতিক কর্তব্যও বটে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বামীরা বেকার বা অসুস্থ; সেখানে কর্মরত স্ত্রীয়ের সহযোগিতা ছাড়া সংসার চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।

আইন ও ন্যায়বিচারের মাঝে ভারসাম্য

‘নিষ্ঠুরতা’র মতো অভিযোগ, যা মূলত গার্হস্থ্য হিংসা আইন বা ৪৯৮A ধারার অধীনে দায়ের হয়, তার অপব্যবহার নিয়েও বহুদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে। হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ সেই বিতর্কেও এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা বাস্তব পরিস্থিতি না বুঝেই হয়, যা পরে আদালতে খারিজ হয়ে যায়।

এই রায়ের মাধ্যমে বিচারপতি গুপ্ত মূলত দেখিয়েছেন যে, আইনের অপব্যবহার রোধ করা এবং প্রকৃত অপরাধের বিচার করা—এই দুইয়ের মাঝে ভারসাম্য রাখা জরুরি। পারিবারিক দায়িত্ব ও নির্যাতনের পার্থক্য বুঝে তবেই অভিযোগ করা উচিত।

পুরুষ অধিকারের পক্ষে সওয়ালকারীদের প্রতিক্রিয়া

এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে পুরুষ অধিকারের পক্ষে কথা বলা বহু সংগঠন ও ব্যক্তি। তাঁদের মতে, এটি শুধু একটি রায় নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একপেশে দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক সাহসী পদক্ষেপ। সংসারে শুধু নারীর নয়, পুরুষেরও নিরাপত্তা থাকা উচিত—এই দাবি তাঁরা বারবার করে আসছেন। হাইকোর্টের এই রায় তাঁদের সেই দাবিকেই আরও দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে।

- Advertisement -
Suparna Parui
Suparna Paruihttps://kolkata24x7.in/author/suparna-parui
হাতেখড়ি চ্যানেলে। খবরের গন্ধ শনাক্ত করার কৌশল শেখা সেখান থেকেই। তারপর ৬ বছর ধরে বিনোদন রাজনীতির খবরের ব্যবচ্ছেদ করে চলেছি। খবর শুধু পেশা নয়, একমাত্র নেশাও বটে।কাজের পাশাপাশি সিনেমা দেখতে, গান শুনতে, বেড়াতে যেতে খুব ভালোলাগে। তাই সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি নতুন অ্যাডভেঞ্চারের উদ্দেশ্যে।
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular