কলকাতা: বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO workload protest) ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও অসন্তোষ রাজ্যের নির্বাচন দপ্তরে তৈরি করেছে নজিরবিহীন পরিস্থিতি। সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ রাত গড়াতেই রূপ নেয় টানা অবস্থান আন্দোলনে। সদ্য গঠিত ‘বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটি’র ডাকে এই আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে রাজ্যের প্রধান নির্বাচন আধিকারিক (CEO) মনোজ কুমার আগরওয়ালের দপ্তর, যা বি.বি.ডি. বাগের তৃতীয় তলায় অবস্থিত।
কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিল করে আসা BLO–রা সোমবার বিকেল থেকেই সিইও দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ চলমান SIR (State Immigration Register) প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিক, অমানবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত কর্মভার চাপানো হয়েছে তাঁদের ওপর। দরজায়–দরজায় ফর্ম বিতরণ, সংগ্রহ এবং অনলাইন আপলোডের দায়িত্ব তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও বিপন্ন করছে। গত কয়েক সপ্তাহে অতিরিক্ত কাজের চাপে অন্তত তিনজন BLO আত্মহত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে পরিবারগুলির পক্ষ থেকে।
সোমবার বিকেল থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। প্রথমে পুলিশ ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলকে দপ্তরে ঢোকার অনুমতি দেয়। কিন্তু ডেপুটেশন জমা দেওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে দিতে সিইওর কেবিনের বাইরে বসে পড়েন। তাঁদের দাবি, “সরাসরি সিইও মনোজ আগরওয়ালকেই ডেকে এনে ডেপুটেশন নিতে হবে। ডেপুটি সিইওর কাছে আমরা কাগজ দেব না।”
ফলে তৃতীয় তলা জুড়ে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের কেবিনের সামনে থেকে সরাতে গেলে সামান্য ধস্তাধস্তিও হয়। পরে উপ-পুলিশ কমিশনার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অফিসের ভেতরেই পুনরায় বসে পড়ে রাতভর অবস্থানের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতও বাড়ে। শাল গায়ে জড়িয়ে বসে থাকা আন্দোলনকারীদের মধ্যে ছিলেন কমিটির কনভেনর মইদুল ইসলাম, অমিত মণ্ডল, সোনালি চক্রবর্তী, তনুশ্রী ভট্টাচার্য, সইফুল্লাহ হালদার সহ সাতজন। মইদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের দাবি একটাই মানবিক আচরণ এবং সহনীয় কর্মভার। তিনি (CEO) নিজে এসে ডেপুটেশন নেবেন, এর কম কিছু মানা হবে না।”
রাত প্রায় ১১.৪০ নাগাদ সিইও মনোজ আগরওয়াল পুলিশি নিরাপত্তায় দপ্তর ত্যাগ করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তবে তাঁর চলে যাওয়ার পরও আন্দোলনকারীরা অবস্থান থেকে সরে আসেননি। সারা রাত ধরে করিডোরে মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালেও চিত্র অপরিবর্তিত। সিইও দপ্তরের বাইরে ও ভিতরে নিরাপত্তা জোরদার হলেও BLO–দের অবস্থান ধর্মঘট চলতে থাকে। করিডোরে ভিড় জমে নিরাপত্তা কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের। এক BLO বলেন, “আমরা বাড়তি কোনও সুবিধা চাই না। শুধু মানবিক আচরণ আর ভোলার মত নয় এমন অতিভার কমানোর দাবি জানাচ্ছি।”
রাজ্যের নির্বাচনী প্রশাসনে এ ধরনের রাতভর দপ্তর অবরোধ বিরল। কর্মভার নিয়ে জেরে SIR প্রক্রিয়াকে ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
