এসআইআরের চাপে বিএলওর মৃত্যু, কমিশনকে আক্রমণ মমতার

কলকাতা: রাজ্যে নির্বাচনী পরিবেশ ঘনিয়ে আসতেই এসআইআর সংক্রান্ত কাজ নিয়ে চূড়ান্ত চাপ তৈরি হয়েছে মাঠপর্যায়ে। বিভিন্ন জেলার ব্লক লেভেল অফিসার (বিএলও)-দের উপর নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়ে যে তীব্র চাপ দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে প্রতিদিন। পরিকাঠামোর ঘাটতি, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সার্ভার ডাউন, অনলাইন আপলোডে অসুবিধা সব মিলিয়ে পরিস্থিতি হয়ে উঠছে আরও জটিল। এর জেরেই একের পর এক আত্মহত্যার (BLO suicide) ঘটনা রাজ্যজুড়ে আতঙ্ক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

Advertisements

শনিবার সেই বিতর্ক আরও তীব্র করে তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডলে তিনি তীব্র ভাষায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হন। তাঁর বক্তব্য, অবৈজ্ঞানিক সময়সীমা ও অমানবিক কাজের চাপের ফলে ব্লক লেভেল কর্মীরা চরম মানসিক চাপে পড়ছেন এবং তার মাশুল হিসাবে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে।

   

শনিবার সকালে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে উদ্ধার হয় বছর চুয়ান্নর রিঙ্কু তরফদারের ঝুলন্ত দেহ। তিনি চাপা বাঙালঝি অঞ্চলের স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের পার্শ্বশিক্ষিকা এবং একইসঙ্গে ৮২-চাপড়া বিধানসভার ২০১ নম্বর অংশের বিএলও ছিলেন। পরিবার জানায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি অনবরত কাজের চাপ ও মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলেন।

পুলিশ উদ্ধার করে একটি দীর্ঘ সুইসাইড নোট, যেখানে রিঙ্কুদেবী লিখেছেন, “আমি বাঁচতে চাই। আমার সংসারে কোনও অভাব নেই। কিন্তু এই সামান্য চাকরির জন্য এরা আমাকে এভাবে ভরাডুবির মাধ্যমে মরতে বাধ্য করল।”

সেই নোটে তিনি পরিবারের সদস্যদের এসআইআর কাজ কীভাবে সম্পন্ন করতে হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত দিকনির্দেশনাও দিয়ে গিয়েছেন যা তাঁর দায়িত্ববোধের গভীরতা প্রকাশ করে। নোটে উল্লেখ রয়েছে ফিল্ড ভিজিট, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম সংগ্রহ, রিজেকশন-অ্যাকসেপ্টেন্স লিস্ট আপলোড, সার্ভারের সমস্যায় বারবার কাজ আটকে যাওয় সব মিলিয়ে তাঁর জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ।

এই ঘটনার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ উগরে দেন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। তিনি এক্স হ্যান্ডল প্রশ্ন করেন, ‘এসআইআরের চাপে এভাবে আর কত জীবন নষ্ট হবে? আর কত মৃতদেহ গুনতে হবে?  এটা এবার অত্যন্ত গুরুতর ব্যাপার হয়ে উঠছে।’ মমতা আরও লিখেছেন, ‘কৃষ্ণনগরের চাপড়ার ২০১ নং বুথের বিএলও, পার্শ্বশিক্ষিকা রিঙ্কু তরফদারের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। এসআইআরের কাজে চাপের কথা তিনি লিখে গিয়েছেন সুইসাইড নোটে।’ 

Advertisements

মুখ্যমন্ত্রীর মতে, রাজ্যে যে পরিকাঠামো রয়েছে, তাতে কম সময়ে এত বড় মাত্রার কাজ শেষ করার নির্দেশ অমানবিক। পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ এবং কর্মীদের মানসিক সুরক্ষা কোনও কিছুই সঠিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

শিক্ষক সংগঠনগুলিও বহুদিন ধরেই এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তাঁদের অভিযোগ ব্লক অফিস থেকে নিয়মিত তাগাদা, সময়সীমা রক্ষা না করলে হুমকি বা ভর্ৎসনা, রাতবিরেতে অনলাইন আপলোডের চাপ, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বা প্রযুক্তিগত সাহায্যের অভাব, এসবই মাঠপর্যায়ের কর্মীদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন এখনও সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে প্রশাসনের একাংশের মত এই ঘটনাগুলি গভীরভাবে তদন্ত করা উচিত এবং এসআইআর প্রক্রিয়ার ধরন নিয়ে নতুন করে ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।