কলকাতা: নাগরাকাটায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর (Khagen Murmu) ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। শুক্রবার সাংসদ নিজেই মুখ খুলে অভিযোগ আনলেন, তাঁকে খুন করার উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছিল, আর সেই চক্রান্তের পেছনে রয়েছেন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।
খগেন মুর্মু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “যারা হামলা চালিয়েছিল, তারা টিএমসির গুন্ডা। তারা বলেছিল— আমরা দিদির লোক। বিজেপির এখানে কোনও প্রয়োজন নেই। আমাদের গাড়ি থেকে টেনে নামানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। যখন পারেনি, তখন ইট ছুঁড়ে কাচ ভেঙে দেয়। যদি টেনে নামাতে পারত, তাহলে আজ আমরা বেঁচে থাকতাম না।”
এই ঘটনার পরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সাংসদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করে। সূত্রের খবর, খগেন মুর্মুর নিরাপত্তা এক্স ক্যাটেগরি থেকে বাড়িয়ে ওয়াই প্লাস ক্যাটেগরি করা হয়েছে। এখন থেকে তাঁর সঙ্গে আরও বেশি সংখ্যক কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকবেন।
এদিকে, ঘটনার দিন সাংসদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তিনিও কিছুটা আহত হন। পরে তাঁকে চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু খগেন মুর্মুর চোখের নীচের হাড় ভেঙে গিয়েছে। তাঁর এক্স-রে রিপোর্ট ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
খগেন মুর্মুর ছেলে অনিমেষ মুর্মুও দাবি করেছেন, “এই হামলা পরিকল্পিত। বাবার জনপ্রিয়তা আদিবাসী সমাজে ক্রমশ বাড়ছিল। তাই তাঁর রাজনৈতিক উত্থান ঠেকাতেই হামলার ছক কষা হয়েছিল।”
নাগরাকাটা থানায় দায়ের হওয়া এফআইআরে মোট আটজনের নাম রয়েছে। পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও অভিযুক্তদের নাম বা রাজনৈতিক সংযোগ প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
এই ঘটনার পর বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত নড়েচড়ে বসেছে। খগেন মুর্মুকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মুখ্যমন্ত্রী আহত সাংসদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাও ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছেন। দিল্লি সূত্রে খবর, সংসদে এই বিষয়টি উত্থাপন করা হতে পারে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, খগেন মুর্মুর অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। তবে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকায় এখনই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের অনুমান, অন্তত ছয় সপ্তাহ বিশ্রাম প্রয়োজন সাংসদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নাগরাকাটার এই ঘটনা উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন সংঘাতের সূচনা করেছে। বিজেপির দাবি, তৃণমূল কংগ্রেস খগেন মুর্মুর জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়েছে। অপরদিকে তৃণমূল বলছে, “এই হামলা সম্পূর্ণ সাজানো নাটক, বিজেপি রাজনৈতিক সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছে।”
প্রশাসন জানিয়েছে, নাগরাকাটায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গোটা এলাকা নজরদারিতে রয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও ঘটনার তদন্তে যুক্ত হয়েছে। খগেন মুর্মুর সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে পোস্ট করছেন। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে বিজেপি কর্মীরা হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করছে।