ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার সকালে সবজির বাজারের হাল হকিকত কি ?

India Inflation Fall September

কলকাতা: উৎসবের মরশুমেও সবজির বাজারে ক্রেতাদের মুখে হাসি নেই। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার সকালে শহরের পাইকারি ও খুচরো বাজার ঘুরে দেখা গেল, পেঁয়াজ, টমেটো, কাঁচালঙ্কা থেকে শুরু করে আদা-রসুন—প্রায় সবজিরই দাম আগের চেয়ে বেশি। দীপাবলি ও ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার চাহিদা, পরিবহণ ব্যয় এবং বৃষ্টির প্রভাবে সরবরাহ কমে যাওয়াই এর অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisements

পেঁয়াজের দামে অগ্নিশিখা

বড় পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ₹২৫ থেকে ₹৪১, ছোট পেঁয়াজের দাম আরও চড়ে ₹৫০ থেকে ₹৮৩। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নাসিক এবং দক্ষিণ ভারতের পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। খুচরো বাজারে যেখানে আগে ২৫-৩০ টাকায় মিলত, এখন সেখানে ৪০ টাকার নিচে ভালো পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।

দুর্বল হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ, কমবে বৃষ্টি-ঝড়ের আশঙ্কা

টমেটো-লঙ্কা হাতের নাগালের বাইরে

টমেটোর দাম কেজিপ্রতি ₹২০ থেকে ₹৩৩, যা গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে কাঁচালঙ্কা এখনও জ্বালাময়, কেজি ₹৪১ থেকে ₹৬৮। “ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় রান্নাবান্না বেশি হয়, তাই টমেটো ও লঙ্কার চাহিদা এক লাফে বেড়ে যায়,” বলেন মানিকতলার এক সবজি বিক্রেতা।

আলু–বাঁধাকপি–বেগুন কিছুটা স্বস্তি

সবজির দামের আগুনের মধ্যে সামান্য স্বস্তি দিয়েছে আলু, বাঁধাকপি ও বেগুন। আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে ₹২৪ থেকে ₹৪০ কেজিতে, বাঁধাকপি ও বেগুন যথাক্রমে ₹৩০–৫০ টাকার মধ্যে। তবে খুচরো বিক্রেতারা জানিয়েছেন, “যদি উত্তরবঙ্গের বৃষ্টির প্রভাব পড়ে, তাহলে আগামী সপ্তাহে এই দামে আর স্থিতিশীলতা থাকবে না।”

পাতা ও শাকসবজির দামেও উর্ধ্বগতি

আমরান্থ পাতা, কলমিশাক ও মেথি পাতা এখন কেজিপ্রতি ₹১৪ থেকে ₹২৩—যা গত বছরের তুলনায় ৩০% বেশি। ধনেপাতা ও কারিপাতা কেজিপ্রতি ₹১১ থেকে ₹১৮, কিন্তু উৎসবের দিনে চাহিদা বেশি থাকায় দাম আরও বাড়তে পারে।

Advertisements

রসুন ও আদার দামে চমক

রসুনের দাম বাজারে আক্ষরিক অর্থে চমকে দেওয়ার মতো—কেজি ₹১০০ থেকে ₹১৬৫, আর আদা ₹৭৪ থেকে ₹১২২ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পাইকারি পর্যায়ে সরবরাহ কম, এবং নবরাত্রি থেকে দীপাবলির পর্বে বাড়তি চাহিদাই এই উর্ধ্বগতির কারণ।

মোচা থেকে করলা সবজিতেও বৈচিত্র্যময় দাম

মোচা, করলা, ঢেঁড়স, শশা—সবজিগুলোর দামও আশানুরূপ নয়। কলা ফুল কেজি ₹১৭ থেকে ₹২৮, করলা ₹৩৯ থেকে ₹৬৪, শশা ও লাউ ₹২৭ থেকে ₹৪৫।

ক্রেতাদের কণ্ঠে হতাশা

গড়িয়া বাজারের এক ক্রেতা বলেন, “ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় ভাইদের জন্য রাঁধব, কিন্তু এই দামে সবজি কিনে রান্না করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রোজ বাজারে দাম বেড়েই চলেছে।” অন্যদিকে বিক্রেতাদের দাবি, “আমাদের হাতে কিছু নেই, পাইকারি বাজারেই সবজির দাম বাড়ছে। পরিবহণ খরচও এখন অনেক বেশি।”

আবহাওয়ার প্রভাব স্পষ্ট

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গে হালকা বৃষ্টি এবং দক্ষিণবঙ্গে আর্দ্রতা বেড়েছে, যার ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় সামান্য সমস্যা হচ্ছে। ফলে উৎসবের মৌসুমে দাম স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে। সব মিলিয়ে, ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিন সকাল থেকেই বাজারে ভিড় থাকলেও ক্রেতাদের মুখে হাসির চেয়ে উদ্বেগই বেশি।