কলকাতা: ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ও ব্রাইব-ফর-জব কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্ট যখন সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দেয়, তখন থেকেই পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে শিক্ষক নিয়োগ (WBSSC recruitment) ইস্যুতে অস্থিরতা অব্যাহত। কিন্তু নতুন করে WBSSC যে পুনঃনিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তা ঘিরেই আবারও ফেটে পড়েছে ক্ষোভ। অভিযোগ নতুন পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিজ্ঞ পুরনো শিক্ষকদের এক পরীক্ষায় বসানো এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ায় তৈরি হয়েছে নতুন বৈষম্য ও অন্যায়ের চিত্র।
সোমবার সন্ধ্যায় সল্টলেকের পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতরের সামনে বিক্ষোভে বসেন নতুন ও পুরনো দুই পক্ষের পরীক্ষার্থীরাই। নতুনদের দাবি, লিখিত পরীক্ষায় উচ্চ নম্বর পেলেও অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে তারা সাক্ষাৎকারে ডাকা হচ্ছে না। পুরনো চাকরিহীন শিক্ষকদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের নতুন করে সুযোগ দেওয়া হলেও তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
আন্দোলনকারী সনহিতা সূর বলেন, “৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় আমরা অনেকেই পূর্ণ নম্বর পেয়েছি। কিন্তু অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ১০ নম্বর না থাকায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। নতুন প্রার্থীদের অভিজ্ঞদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামানোই অন্যায়।”
চন্দন বিশ্বাস জানান, “ক্লাস ১১–১২ শিক্ষকদের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন চলছে। আমাদের নাম তালিকায় নেই। আমরা ন্যায় পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
অন্যদিকে, পুরনো ২০১৬ প্যানেলের শিক্ষক কৃষ্ণগোপাল চক্রবর্তী জানান, “অভিজ্ঞতার জন্য আমি অতিরিক্ত নম্বর পেলেও নতুনদের সুযোগ দিতে হলে সরকারকে অতিরিক্ত নতুন পদ তৈরি করতে হবে। তা না হলে অন্যায় বাড়বে।”
গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও নন-টিচিং কর্মীর নিয়োগ বাতিল করে জানায়, দাগি ও নির্দোষদের আলাদা করার উপায় নেই। পরে ১৭ এপ্রিল আদালত জানায়, নির্দোষদের ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত চাকরিতে রাখা যেতে পারে, কিন্তু সবাইকে নতুন পরীক্ষায় বসতে হবে। একই সঙ্গে বয়সসীমায় ছাড়ও দেওয়া হয়।
রাজ্য সরকার এরপর ঘোষণা করে নতুন করে ১১,৫১৭টি (ক্লাস ৯–১০), ৯,৯১২টি (ক্লাস ১১–১২) এবং ১,৫৭১টি (গ্রুপ–সি ও ডি) অতিরিক্ত পদ তৈরি হবে। কিন্তু কমিশনের নতুন নিয়ম অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর নিয়ে ওঠে নতুন প্রশ্ন। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জুনে মামলা দায়ের হলেও উচ্চ আদালত কোনও নির্দেশ দেয়নি, কারণ সুপ্রিম কোর্ট পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছিল।
এবার অভিজ্ঞতা নম্বর নিয়ে ফের নতুন মামলা হয়েছে বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে। আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানান, “অতিরিক্ত অভিজ্ঞতা নম্বর পুরো পরীক্ষাকে পক্ষপাতদুষ্ট করেছে। এটি বাতিল হওয়া উচিত।”
এদিকে যেসব ‘নন-টেইন্টেড’ শিক্ষক লিখিত পরীক্ষা পাস করতে পারেননি, তারাও নতুন করে আন্দোলনে নেমেছেন। তারা দাবি করছেন সরকার আরও নতুন পদ তৈরি করুক, নাহলে বহু অভিজ্ঞ শিক্ষক আজীবন বেকার থেকে যাবেন।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “সরকার পরিস্থিতির প্রতি সংবেদনশীল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আইনজীবীদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।” বিজেপি অভিযোগ তুলেছে, কিছু দাগি শিক্ষকও পরীক্ষায় বসেছেন যা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশবিরোধী। অগ্নিমিত্রা পল বলেন, “ফ্রেশার ও অভিজ্ঞদের জন্য আলাদা পরীক্ষা নিলে এ অস্থিরতা তৈরি হতো না।”
WBSSC-কে কেন্দ্র করে শিক্ষক নিয়োগে অস্থিরতা তাই ফের চরমে পৌঁছেছে, এবং রাজ্যের হাজারো বেকার শিক্ষার্থী শিক্ষকের ভবিষ্যৎ আবার অনিশ্চয়তায় আটকে পড়েছে।
