কলকাতা: ফুলবাগানে ফের সরকারি হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির অভিযোগে তোলপাড় কলকাতা (Baby Kidnapping)। বিসি রায় শিশু হাসপাতালের ভেতর থেকে মাত্র ৬ মাসের এক শিশুকে কীভাবে উধাও করে দেওয়া হলো, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে হাসপাতাল প্রশাসন। শিশুর পরিবার ভেঙে পড়েছে, আর পুলিশ বিস্তৃত তদন্ত শুরু করেছে।
ভাঙড়ের বাসিন্দা ওই মহিলা সকালেই তাঁর অসুস্থ ছয় মাসের শিশুকে নিয়ে বাসে চেপে রওনা দেন বিসি রায় হাসপাতালে। সেখানেই, বাসে ওঠার পর তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় এক অচেনা মহিলার। কথায় কথায় সেই মহিলা নিজেকে ভাঙড়ের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। শিশুর অসুস্থতা দেখে সহানুভূতি জানিয়ে তিনি শিশুর মায়ের পাশে বসেই পুরো পথজুড়ে সাহায্যের আশ্বাস দেন।
মুর্শিদাবাদে নাশকতার ছক! পুলিশের রাডারে সইদুল
হাসপাতালে পৌঁছনোর পরও সাহায্য করতে থাকেন ওই অচেনা মহিলা। তিনি মাঝে মাঝেই শিশুটিকে কোলে নিচ্ছিলেন, আবার কখনও শিশুর মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। পরিবারের দাবি এই আচরণে সন্দেহের কিছুই ছিল না, বরং মনে হয়েছিল মানুষটি সত্যিই সহানুভূতিশীল।
ডাক্তার দেখাতে গিয়ে ভিড় থাকায় শিশুর মা কিছুটা বিপাকে পড়েন। সেই সময় অচেনা মহিলা তাঁকে বলেন, “আপনি ওষুধ নিয়ে আসুন, আমি শিশুটাকে কোলে করে অপেক্ষা করছি।” অসীম ভরসায় শিশুর মা তাঁকে শিশুটিকে কোলে ধরে থাকতে দিয়ে হাসপাতালের ওষুধ কাউন্টারের দিকে যান। কিন্তু ফিরে এসে ঘটল অপ্রত্যাশিত ভয়াবহতা।
শিশুর মা দেখেন যে জায়গায় তিনি শিশুকে রেখে গিয়েছিলেন, সেখানে নেই সেই মহিলা, নেই তার সন্তানও। মুহূর্তের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়ে যায়। হাসপাতালের করিডরজুড়ে ছুটোছুটি, কান্নার আওয়াজে ভরে ওঠে পরিবেশ। প্রথমে হাসপাতাল নিরাপত্তা কর্মীরা খোঁজ শুরু করলেও, কোনও সিসিটিভি ফুটেজে সেই মহিলাকে স্পষ্ট চিহ্নিত করা যায়নি বলে সূত্রের খবর।
এরপর ফুলবাগান থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন শিশুটির মা। অভিযোগ দায়েরের পরই পুলিশ নড়েচড়ে বসে। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, আশপাশের রাস্তা, মোড়, বাসস্ট্যান্ড সব জায়গায় খোঁজ চলছে ওই সন্দেহভাজন মহিলার।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ঢোকার সময় সেই মহিলাকে সংক্ষিপ্তভাবে ক্যামেরায় দেখা গেলেও, শিশুকে নিয়ে বের হওয়ার সময় তার মুখ স্পষ্ট নয়। তিনি সম্ভবত মাথায় ওড়না টেনে মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। তদন্তকারীরা অনুমান করছেন, এই ঘটনা একটি সংগঠিত শিশুচুরি চক্রের অংশ হতে পারে।
শিশুর পরিবারের অবস্থা এখন অত্যন্ত শোচনীয়। শিশুর মা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁর কথায়, “ওকে আমি নিজের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। মানুষটাকে এতটাই ভরসা হয়েছিল! বুঝতেই পারিনি আমার সন্তানের ক্ষতি করবে।” স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক মাসে কলকাতা ও আশপাশে শিশু চুরির এমন একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলিকে কেন্দ্র করে এই ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকায় উদ্বেগ বাড়ছে অভিভাবকদের মধ্যে।
হাসপাতাল প্রশাসনের তরফে ‘সহানুভূতি’ জানানো হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমন স্পর্শকাতর জায়গায় কীভাবে কোনও অচেনা ব্যক্তি শিশুকে নিয়ে সহজেই চলে যেতে পারে এই প্রশ্নের জবাব এখনও মেলেনি। পুলিশ তদন্তে নেমেছে পুরোদমে। সন্দেহভাজন মহিলার স্কেচ তৈরির চেষ্টা চলছে, বাস যাত্রাপথ ও হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের দাবি, “আমরা খুব দ্রুত শিশুকে উদ্ধার করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”


