HomeWest BengalKolkata CitySIR আতঙ্কে মৃতদের পাশে অভিষেক, গড়লেন বিশেষ সহায়ক কমিটি

SIR আতঙ্কে মৃতদের পাশে অভিষেক, গড়লেন বিশেষ সহায়ক কমিটি

- Advertisement -

কলকাতা: রাজ্যজুড়ে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা SIR-কে ঘিরে আতঙ্ক থামছেই না। ভোটার তালিকা সংশোধনের এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই বহু মানুষের মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে যে তাঁদের নাম বাদ পড়তে পারে। বিশেষ করে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম নেই, তাঁদের মধ্যেই উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। এমন এক প্রেক্ষাপটে SIR–আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের, এমনই অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মৃত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তাঁর নির্দেশে গঠন করা হয়েছে একটি বিশেষ কমিটি, যেখানে দলের সাংসদ, মন্ত্রী ও প্রথম সারির নেতারা থাকবেন। তাঁরা মৃতদের বাড়ি বাড়ি যাবেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পৌঁছে দেবেন।

   

৪ নভেম্বর থেকে বুথ লেভেল অফিসাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনিউমারেশন ফর্ম পূরণের কাজ শুরু করার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে উদ্বেগ দেখা দিতে শুরু করে। বহু মানুষ মনে করছেন, SIR-এর নামে যোগ্য ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হতে পারে, যার ফলে তাঁরা ভোটাধিকার হারাতে পারেন। সেই আশঙ্কা থেকেই অনেকের মধ্যে তীব্র মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে, যা হৃদরোগ, শারীরিক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ।

এই পরিস্থিতিতে SIR প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ৪ নভেম্বর কলকাতার রাস্তায় মহামিছিলের নেতৃত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জোড়াসাঁকোর জনসভা থেকে SIR প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে অভিষেক বলেছিলেন, “আগে মানুষ সরকারকে বাছত, আজ সরকার ভোটার বাছছে।”

তিনি আরও বলেন, “একজন যোগ্য ভোটারকেও বাদ পড়তে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আমরা দিল্লি গিয়ে লড়াই করব।” অভিষেক দাবি করেন, বারবার বাংলার মাটিতে পরাজিত হয়ে বিজেপি প্রতিহিংসা থেকে SIR–কে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

মৃত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে দলের এই বিশেষ কমিটিকে ইতিমধ্যেই মাঠে নামানো হয়েছে। আজ থেকেই বিভিন্ন জেলায় নেতারা বাড়ি বাড়ি যাবেন বলে জানা গেছে। উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে মৃত প্রদীপ করের বাড়িতে যাবেন সাংসদ সামিরুল ইসলাম ও পার্থ ভৌমিক।

টিটাগড়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন মন্ত্রী শশী পাঁজা ও ছাত্রনেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। ডানকুনিতে মৃতের পরিবারের বাড়িতে যাবেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও সুদীপ রাহা। এছাড়াও হুগলিতে জয়া দত্ত এবং উলুবেড়িয়ায় অরূপ চক্রবর্তী নেতৃত্ব দেবেন স্থানীয় পর্যায়ের সহায়তায়। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্বও।

তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দায়িত্ব নয়, মানবিক দায়িত্বও। তাঁদের বক্তব্য, মানুষ যখন আতঙ্কে, তখন পাশে দাঁড়ানোই রাজনীতির প্রথম শর্ত। শাসকদলের দাবি, নির্বাচন কমিশন যতই আশ্বাস দিক না কেন, বাস্তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভয় তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে মাঠে নেমে কাজ করা জরুরি। সেই কারণেই এই বিশেষ কমিটির গঠন, যার মূল লক্ষ্য হবে মানুষের মানসিক ভরসা ফেরানো, প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করা, এবং প্রয়োজন হলে নাম অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করা।

যদিও শাসকদলের এই পদক্ষেপকে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। বিজেপি-সহ অন্যান্য দলগুলির দাবি, এটি সহানুভূতি সংগ্রহের রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। তাদের মতে, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। তবে বিরোধীদের সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের দাবি, এটি শুধুমাত্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ, যেখানে রাজনীতির চেয়ে মানবিকতা বড়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, SIR নিয়ে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গে ধীরে ধীরে একটি বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় হয়ে উঠছে। তাই এই বিশেষ কমিটির পদক্ষেপ শুধু তাৎক্ষণিক সাহায্য নয়, দীর্ঘমেয়াদি জনমত গঠনের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভরসা তৈরি করা সম্ভব হলে এটি আগামী দিনে বড় প্রভাব ফেলবে, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular