এই প্রথমবার দীঘার রথযাত্রা (Rath Yatra) উৎসবে জনসমাগম ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে দেখা যাবে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকেও। লালবাজারের অধীনে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্টদের এবার পাঠানো হচ্ছে দীঘায়, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের সহযোগিতায় রথযাত্রা উৎসবের নিরাপত্তা ও ভিড় সামাল দিতে।
কলকাতা পুলিশের বিশেষ টিম দীঘায়
জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ১০ জন অভিজ্ঞ সার্জেন্টকে পাঠানো হচ্ছে দীঘায়। ২৫ জুন তাঁরা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট করবেন। ২৫ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত তাঁরা দীঘায় বিশেষ ডিউটিতে থাকবেন। ওই তিনদিন রথযাত্রা উপলক্ষ্যে দীঘা ও সংলগ্ন অঞ্চলে যে বিপুল সংখ্যক ভক্ত ও পর্যটক ভিড় করবেন, তাদের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্যই এই উদ্যোগ।
মোটরবাইক সহ ডিউটিতে সার্জেন্টরা
এই সার্জেন্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিজেদের ব্যবহৃত মোটর বাইক সহ উপস্থিত থাকতে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২৫ জুন সকালেই তাঁদের রিপোর্ট করতে হবে এবং ডিউটির দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এই সার্জেন্টদের নিয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুর প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ শুরু হয়েছে।
দীঘা এখন রাজ্য প্রশাসনের ফোকাস
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পর্যটন নগরী দীঘা ক্রমেই ভিড় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিক থেকে কলকাতার সঙ্গে তুলনীয় হয়ে উঠছে। শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা— প্রতিটি ছুটির মরশুমেই দীঘায় পর্যটকের ঢল নামে। আর রথযাত্রার মতো ধর্মীয় উৎসবে ভক্তদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আগে রাজ্য পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন মিলেই এই ভিড় সামাল দিত। কিন্তু এবার পরিস্থিতি আরও সুসংগঠিত রাখতে লালবাজারের সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজ্য প্রশাসনের।
কেন এই বিশেষ উদ্যোগ?
পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের মতে, অতীতে কয়েকবার দীঘার বড়ো উৎসব বা ছুটির সময়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে দীঘা স্টেশন সংলগ্ন এলাকা, পুরানো ও নতুন দীঘা রোড, শঙ্করপুর সংলগ্ন রাস্তা, চৌরাস্তা সহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে যানজট দেখা দেয়। ফলে স্থানীয় পর্যটকদের যেমন সমস্যা হয়, তেমনি বিশৃঙ্খলার আশঙ্কাও থাকে।
কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট অভিজ্ঞ। নিয়মিত বড়ো মিছিল, উৎসব, রাজনৈতিক জমায়েত, কিংবা বড়োদিন, দুর্গাপুজোর মতো উৎসবে তারা যে দক্ষতার সঙ্গে ট্রাফিক পরিচালনা করে, তার ফলেই এই উদ্যোগ বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর।
স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
দীঘা থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের অভিজ্ঞ সার্জেন্টরা আমাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবেন। দীঘার রথযাত্রা এখন আর শুধু স্থানীয় উৎসব নয়, এটি এক জাতীয় পর্যায়ের পর্যটন-ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাই নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”
পর্যটকদের জন্য আলাদা গাইডলাইন
রথ উপলক্ষ্যে পর্যটকদের জন্য আলাদা নির্দেশিকাও জারি করা হচ্ছে। যেসব গাড়ি দীঘায় প্রবেশ করবে, তাদের কোথায় পার্কিং হবে, কীভাবে একমুখী বা নিয়ন্ত্রিত রুটে গাড়ি চালাতে হবে, তাও আগাম জানিয়ে দেওয়া হবে। দীঘা শহরজুড়ে সিসিটিভি নজরদারি থাকবে এবং কলকাতা পুলিশের একটি দল তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে।
রথযাত্রা উৎসব ঘিরে দীঘায় সাজো সাজো রব
ইতিমধ্যেই দীঘা শহরে রথ তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্থানীয় প্রশাসন, পুরসভা ও পর্যটন দফতর মিলে শহরজুড়ে আলোকসজ্জা, সাফাই ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার কাজ চালাচ্ছে। হোটেলগুলোতে বুকিং আগেই ফুল হয়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরাও আশাবাদী এবারের রথযাত্রা দীঘার অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
দীঘার রথযাত্রা ঘিরে এবার যে প্রশাসন অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টদের মাঠে নামানো সেই পরিকল্পনারই বড় অংশ। দীঘায় পর্যটক ও ভক্তদের সুরক্ষা ও সুবিধা দিতে এমন উদ্যোগ ভবিষ্যতের বড়ো উৎসবেও দৃষ্টান্ত হতে পারে।