কলকাতা: কলকাতায় ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে পরিবেশদূষণ। শুধু বায়ুদূষণ নয়, এবার আশঙ্কাজনক মাত্রায় বাড়ছে ওজোন (O₃) দূষণও (Kolkata Ozone Pollution)। সম্প্রতি ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (CSE)’-এর প্রকাশিত রিপোর্টে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক চিত্র। রিপোর্ট বলছে, শুধু কলকাতা নয়, দূষণের তালিকায় রয়েছে বেঙ্গালুরু, মুম্বই, হায়দরাবাদ ও চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলোও।
ওজোন দূষণ কী এবং কেন তা বিপজ্জনক?
ওজোন একটি গ্যাস, যা সাধারণত তিনটি অক্সিজেন অণুর সংমিশ্রণে তৈরি হয়। উচ্চ স্তরে থাকলে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। কিন্তু মাটির কাছাকাছি স্তরে এই গ্যাস বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। গাড়ির ধোঁয়া, শিল্প দূষণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx), কার্বন মনোক্সাইড (CO), ও ভলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড (VOCs)-এর সঙ্গে সূর্যের আলো মিলে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি করে এই বিষাক্ত গ্যাস।
এই গ্যাস শ্বাসযন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসের মতো সমস্যায় জর্জরিতদের জন্য এই দূষণ হয়ে উঠতে পারে জীবনঘাতী। শিশু ও প্রবীণদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি বেশি। শুধু মানুষ নয়, ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি করে ওজোন।
কী বলছে রিপোর্ট? শহর ধরে পরিসংখ্যান
কলকাতা: CSE-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এবছরের গ্রীষ্মে ২২ দিন কলকাতায় ওজোন দূষণের মাত্রা ছিল মানদণ্ডের ঊর্ধ্বে। যদিও এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৪৫% কম। শহরের রবীন্দ্র সরোবর ও যাদবপুর এলাকায় দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
বেঙ্গালুরু: ৯২ দিনের মধ্যে ৪৫ দিন ছিল ওজোন মাত্রার ঊর্ধ্বে, যা গত বছরের তুলনায় ২৯% বেশি।
মুম্বই: ৩২ দিন ধরে ওজোন দূষণ ছিল বেশি, যদিও গত বছরের তুলনায় ৪২% হ্রাস পেয়েছে।
হায়দরাবাদ: ২০ দিনের মধ্যে দূষণের মাত্রা ছিল বেশি, যা ৫৫% কম।
চেন্নাই: এই বছর ১৫ দিন ওজোন দূষণ রেকর্ড হয়েছে, যেখানে গত বছর তা ছিল শূন্য। আলান্দুর সবচেয়ে দূষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।
দূষণ বাড়ছে কেন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
CSE-এর গবেষক অনুমিতা রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, ওজোন দূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই কড়া পদক্ষেপ না নিলে তা গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যায় রূপ নিতে পারে। যানবাহন ও শিল্প দূষণই মূল কারণ। তাপমাত্রা এবং সূর্যালোকের মাত্রা বাড়লে এই গ্যাস তৈরি হয় দ্রুত গতিতে।
তাঁর পরামর্শ, যান চলাচলের উপরে নিয়ন্ত্রণ, শিল্প আবর্জনার সঠিক নিষ্কাশন, আবর্জনা পোড়ানোর উপর নজরদারি এবং পরিবেশবান্ধব শক্তির ব্যবহারে জোর দেওয়ার সময় এখনই।
কলকাতাসহ দেশের বড় শহরগুলির জনসংখ্যা এবং পরিবহন ব্যবস্থার চাপে এমন দূষণ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এখনই সচেতন না হলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে তার প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে বাধ্য।