কোনও ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ মেট্রো পরিষেবা, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা

কলকাতা: টানা দ্বিতীয় দিনেও ভরসা দিল না শহরের মেট্রো পরিষেবা (Kolkata Metro)। মঙ্গলবারের বিশৃঙ্খলার পর বুধবারও ফের বিপাকে পড়লেন নিত্যযাত্রীরা। দুপুর গড়ানোর আগেই হঠাৎ করে…

কলকাতা: টানা দ্বিতীয় দিনেও ভরসা দিল না শহরের মেট্রো পরিষেবা (Kolkata Metro)। মঙ্গলবারের বিশৃঙ্খলার পর বুধবারও ফের বিপাকে পড়লেন নিত্যযাত্রীরা। দুপুর গড়ানোর আগেই হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হল হাওড়া–সল্টলেক সংযোগকারী গ্রিন লাইন মেট্রো পরিষেবা। প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পরিষেবা বন্ধ থাকায় যাত্রীদের মধ্যে দেখা গেল তীব্র অসন্তোষ ও বিভ্রান্তি। আরও আশ্চর্যের বিষয়, বন্ধের কারণ সম্পর্কে কোনওরকম সরকারি ঘোষণা পর্যন্ত করা হয়নি মেট্রো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।

এদিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ হাওড়া থেকে সল্টলেকগামী মেট্রো হঠাৎই থেমে যায়। অফিসযাত্রা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়া সাধারণ মানুষ তখন কার্যত ফেঁসে যান স্টেশনে। অনেকেই বাধ্য হয়ে বিকল্প পরিবহনের খোঁজে নেমে পড়েন রাস্তায়। শেষ পর্যন্ত কিছু সময় পরে পরিষেবা আংশিকভাবে চালু হলেও তখন পর্যন্ত যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

   

এই প্রথম নয়, মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরের উত্তর–দক্ষিণ করিডরে একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দক্ষিণেশ্বর থেকে শহীদ ক্ষুদিরামগামী মেট্রোতে বারবার বিলম্ব হয়েছিল সিগন্যালিং সমস্যার কারণে। একের পর এক ট্রেন মাঝপথে থেমে থাকায় যাত্রীরা প্রায় ১৫ মিনিট বা তারও বেশি সময় প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হন। বিকেলের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও রাতের দিকে ফের বিপত্তি দেখা দেয়, যার জেরে রাতের পরিষেবাও ব্যাহত হয়েছিল।

বুধবারও সেই একই ছবি। হাওড়া–সল্টলেক মেট্রো বন্ধ হওয়ার পর কোনওরকম তথ্য বা ঘোষণা না থাকায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, নিয়মিত সিগন্যালিং সমস্যা এবং পরিষেবা বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও কেন আগাম সতর্কতা বা বিকল্প পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে না।

মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে যে, “প্রযুক্তিগত সমস্যার” কারণে সাময়িকভাবে পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে বলেও দাবি তাঁদের। কিন্তু যাত্রীরা বলছেন, প্রতি কয়েকদিন অন্তর এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, যা কলকাতা মেট্রোর প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করছে।

Advertisements

বৃষ্টিজনিত দুর্যোগে ইতিমধ্যেই শহরের রাস্তায় জল জমে রয়েছে, যার ফলে বাস ও ট্যাক্সি পরিষেবাও সীমিত। এই পরিস্থিতিতে মেট্রোই ছিল মানুষের একমাত্র ভরসা। কিন্তু সেখানে বারবার পরিষেবা ব্যাহত হলে মানুষ কার্যত বিকল্পবিহীন অবস্থায় পড়েন। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষেরা অফিসে পৌঁছাতে মারাত্মক সমস্যার মুখে পড়ছেন।

পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতা মেট্রোর মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবায় নিয়মিত প্রযুক্তিগত সমস্যা ঘটলে তা শুধু যাত্রীদের জীবনকেই দুর্বিষহ করে তোলে না, বরং গোটা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাঁদের পরামর্শ, অবিলম্বে আধুনিক সিগন্যালিং প্রযুক্তি, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং যাত্রীদের আগাম সতর্কীকরণের ব্যবস্থা করা দরকার।

টানা দুই দিনের মেট্রো বিপর্যয়ে নাজেহাল কলকাতাবাসী। উৎসবের মরসুম ঘনিয়ে আসায় আগামী দিনে যাত্রীসংখ্যা আরও বাড়বে বলে অনুমান। প্রশ্ন একটাই — সেই বাড়তি চাপ সামলাতে প্রস্তুত কি মেট্রো রেল? নাকি এই অচলাবস্থা চলতেই থাকবে?

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News