২১ জুলাই সভা ঘিরে হাইকোর্টে মামলা, পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নে আবেদন

কলকাতা: শহরের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক জমায়েতগুলির মধ্যে অন্যতম — ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সভা (21 July Martyrs’ Day Rally)। ২১ জুলাই সভা ঘিরে হাইকোর্টে মামলা,…

২১ জুলাই সভা ঘিরে হাইকোর্টে মামলা, পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নে আবেদন

কলকাতা: শহরের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক জমায়েতগুলির মধ্যে অন্যতম — ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সভা (21 July Martyrs’ Day Rally)। ২১ জুলাই সভা ঘিরে হাইকোর্টে মামলা, পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নে আবেদন। প্রতিবছর এই দিনটিতে ধর্মতলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ জমায়েত হন তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকে, শহিদ দিবস পালনে। এবার সেই সভা ঘিরেই হাই কোর্টে মামলা দায়েরের অনুমতি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। জনসাধারণের দুর্ভোগের অভিযোগ তুলে অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স ইউনিয়নের (AILU) তরফ থেকে এই মামলা দায়েরের আবেদন করা হয়েছিল।

আদালত জানিয়ে দিয়েছে, মামলাটি গ্রহণযোগ্য এবং শুনানি চলবে নির্দিষ্ট সময়ে। AILU-এর পক্ষে জানানো হয়েছে, প্রতিবছর এই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন রাস্তা কার্যত অচল হয়ে পড়ে, জনজীবন বিপর্যস্ত হয়, অফিসযাত্রী, রোগী ও পরীক্ষার্থীরা মারাত্মক সমস্যায় পড়েন।

   

আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের কর্মসূচি পালন করার অধিকার রয়েছে — এটি এক গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে সেই কর্মসূচি যেন সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত না করে, সেই বিষয়েও নজরদারি রাখা কর্তব্য প্রশাসনের। তাই পুলিশ ও প্রশাসন যেন আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে, বিশেষ করে ট্রাফিক ও মিছিল নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত পরিকল্পনা করে।

এই মামলা যেমন বর্তমান পরিস্থিতির প্রতিফলন, তেমনই ২১ জুলাইয়ের ইতিহাসও জড়িয়ে রয়েছে এক বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। ১৯৯৩ সালের এই দিনেই পুলিশের গুলিতে শহিদ হন যুব কংগ্রেসের ১৩ জন কর্মী। সেই সময় রাজ্যে সিপিএমের জ্যোতি বসুর সরকার। ভোটে ছাপ্পা, রিগিং ও দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। নেতৃত্বে ছিলেন সেই সময়কার যুব কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এরপর থেকেই প্রতিবছর তৃণমূল কংগ্রেস এই দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে হাজার হাজার কর্মী ধর্মতলায় আসেন, একটি মেগা জমায়েত ও রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে।

Advertisements

রাজ্য প্রশাসনের কাছে ২১ জুলাই মানেই এক বৃহৎ প্রশাসনিক প্রস্তুতির দিন। ধর্মতলা এবং আশপাশের অঞ্চল বন্ধ হয়ে যায়, বহু অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে বা অর্ধদিবস চালু থাকে। রাস্তাঘাটে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়, যাত্রীরা পড়েন চরম সমস্যায়।

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এবার দেখা যাবে প্রশাসন কীভাবে পরিকল্পনা নেয় এই ভোগান্তি রুখতে। কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই রুটম্যাপ তৈরি করছে, কোথায় কোন মিছিল ঢুকবে, কোথায় ব্যারিকেড হবে — তার খসড়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

২১ জুলাই শহিদ দিবস রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তবে নাগরিক সুবিধা ও অধিকারও গণতন্ত্রেরই অঙ্গ। তাই জনসাধারণের ভোগান্তি রোধে আদালতের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক কর্মসূচি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তা যেন নাগরিক জীবনে ভার না হয়ে দাঁড়ায় — এই বার্তাই দিতে চায় আদালত।