ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সিবিএসই (CBSE) ও আইসিএসই (ICSE) বোর্ডের অনেক ছাত্র-ছাত্রী এবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দশম শ্রেণি পাশের পর, অন্যান্য বোর্ডের পড়ুয়ারা রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের অধীনে পড়াশোনার জন্য পছন্দ করছেন।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পরিসংখ্যান
বর্তমানে, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (WBCHSE) এক নয়া দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রাজ্য বোর্ডে ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে। একাদশ শ্রেণীতে সিবিএসই ও আইসিএসই বোর্ডের কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী রাজ্যের বোর্ডের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কলকাতা থেকে সবচেয়ে বেশি পড়ুয়া অন্যান্য বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সেমিস্টারের প্রবর্তন, এটাই বড় পরিবর্তন হিসেবে উঠে এসেছে। সেমিস্টার সিস্টেমের ফলে, অন্যান্য বোর্ডের ছাত্র-ছাত্রীরা এখন রাজ্য বোর্ডে পড়াশোনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই নতুন শিক্ষাবর্ষে রাজ্য বোর্ডের অধীনে রেজিস্ট্রেশন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রাজ্য সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থার নতুন দিশা নির্দেশ করছে।
রাজ্যের বোর্ডের প্রতি আগ্রহ কেন বাড়ছে?
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ দাবি করছে, সেমিস্টার সিস্টেমের ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় আগ্রহ বেড়েছে। একাধিক শিক্ষাবিদ মনে করছেন, রাজ্য বোর্ডের সেমিস্টার সিস্টেম ছাত্রদের পড়াশোনার মান উন্নত করার পাশাপাশি পরীক্ষার চাপও কমাবে। সিবিএসই ও আইসিএসই বোর্ডের পাশাপাশি রাজ্য বোর্ডের অধীনে পড়াশোনা করতে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীরা মনে করছেন, এতে তাদের জন্য আরেকটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে যা তাদের শিক্ষা জীবনের জন্য সহায়ক হবে।
পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণ
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে রাজ্য বোর্ডের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করা ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৭ লক্ষ ৬৯ হাজারেরও বেশি। অথচ, চলতি বছর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে ৭ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থী। এমন পরিস্থিতিতে, মাধ্যমিকের চেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এত বেশি ছাত্র-ছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করছেন, তা অবশ্যই একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।
এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, “এটি আমাদের জন্য একটি বড় সাফল্য। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্বাস এবং আগ্রহ বাড়ছে। আমাদের রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণের ফলে, শিক্ষার্থীরা রাজ্য বোর্ডে আরও ভালো সুযোগ পাচ্ছে।”
সেমিস্টার সিস্টেমের প্রভাব
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজ্য বোর্ডে সেমিস্টার সিস্টেম চালু হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা এতে অধিক আগ্রহী হচ্ছে। এই সিস্টেমের ফলে, প্রতি বছর দুটি পরীক্ষা হবে এবং ছাত্রদের জন্য সময়সীমা এবং চাপ কমানো হবে। অনেক ছাত্র মনে করছেন, এটি তাদের পড়াশোনা করতে আরও সুবিধাজনক হবে। সেমিস্টার সিস্টেমে পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটু বিরতি থাকায় ছাত্রদের মনোযোগ বজায় রাখতে সহায়তা করবে এবং শিক্ষার মানও উন্নত হবে বলে তারা আশা করছেন।
কলকাতার অবদান
কলকাতা, যেখানে অন্যান্য বোর্ডের স্কুলগুলির সংখ্যা বেশি, সেখানে সবচেয়ে বেশি ছাত্র-ছাত্রী রাজ্য বোর্ডে ভর্তি হতে আগ্রহী হচ্ছে। শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, কলকাতায় আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি রাজ্য বোর্ডের সেমিস্টার সিস্টেমের প্রচলন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নতুন করে আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে।
ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ভবিষ্যতে আরও আধুনিক ও কার্যকরী শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করতে কাজ করছে। একাদশ শ্রেণীতে সেমিস্টার সিস্টেমের পর্যালোচনার পর, আরও কিছু পরিবর্তন আনা হতে পারে যা ছাত্রদের জন্য আরও উপকারী হবে।
উপসংহার
রাজ্য বোর্ডে সিবিএসই ও আইসিএসই বোর্ডের ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বাড়ানো, সেমিস্টার সিস্টেমের প্রবর্তন এবং শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণের ফলে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন দিশা দেখা যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয় হবে, আগামী দিনে রাজ্য বোর্ডের প্রতি এই আগ্রহ কীভাবে শিক্ষার মান এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনে ভূমিকা রাখে।