নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুর: আসন্ন ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল ক্রমেই সরগরম হয়ে উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গ বিজেপির দুই পরিচিত মুখ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) ও হিরণ চট্টোপাধ্যায় রাজনীতির চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন। দলবদলের গুঞ্জন, কর্মসূচি ভিন্নতা, এবং জনসংযোগ কৌশলে তাঁরা নিজেদের পৃথক অবস্থান স্পষ্ট করছেন।
গত কয়েক মাস ধরেই দিলীপ ঘোষ ও হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে দলবদলের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল রাজনৈতিক মহলে। বিশেষত দিলীপ ঘোষের তৃণমূল যোগদানের জল্পনা নিয়ে জোর আলোচনা চলছিল। তবে ২১ জুলাইয়ের আগে তাঁরা যে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, তা এই জল্পনার অবসান ঘটিয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে.পি. নাড্ডার সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করে ফিরে আসার পরেই দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তৃণমূল সরকারের আমলে বিজেপি কর্মীদের উপর হওয়া ‘রাজনৈতিক হিংসা’র প্রতিবাদ জানাতে তিনি ২১ জুলাই খড়গপুরে ‘শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভা’ আয়োজন করবেন।
ইতিমধ্যেই রবিবার রাতে খড়গপুর শহরে পৌঁছে গেছেন দিলীপ, পরিদর্শন করেছেন গিরি ময়দানের সভাস্থল। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে দিলীপ ঘোষ বিজেপির সঙ্গে তাঁর নিষ্ঠা এবং সক্রিয় ভূমিকা আবারও প্রমাণ করতে চাইছেন।
অন্যদিকে, খড়গপুরের বর্তমান বিধায়ক ও অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়ও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। তিনিও একদিনেই ঘোষণা করেছেন জনমুখী এক কর্মসূচির—‘আপনার বিধায়ক আপনার পাশে’। এই উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বিধানসভা এলাকার বাসিন্দারা কোনও সমস্যায় পড়লে নির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করলেই তিনি নিজে কিংবা তাঁর টিম সরাসরি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবেন।
এই কর্মসূচিকে ঘিরে ইতিমধ্যেই স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকের মতে, হিরণ দলের ভেতরেও নিজের অবস্থান ও জনপ্রিয়তা বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছেন। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তৈরি করাও তাঁর মূল লক্ষ্য।
দু’জনেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁরা বিজেপিতেই আছেন এবং থাকবেন। হিরণ সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘এই সমস্ত দলবদলের খবর অবান্তর। আমি বিজেপির সৈনিক, মানুষের জন্য কাজ করাই আমার মূল লক্ষ্য।’’
২১ জুলাইয়ের আগে দিলীপ ও হিরণ—উভয়েরই স্বতন্ত্র কর্মসূচি রাজনৈতিক মহলে একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। একজন দলীয় ‘শহিদ’দের শ্রদ্ধা জানাতে কর্মসূচি করছেন, অপরজন জনগণের দরজায় পৌঁছতে চাইছেন। এই ভিন্ন ভিন্ন বার্তা আদতে বিজেপির ভেতরেই দুই প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সর্বোপরি, খড়গপুর এখন বঙ্গ রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠছে। দুই হেভিওয়েট নেতার আলাদা পথ ও অবস্থান আগামী দিনে বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণে কী প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।