কেষ্ট গড়ে মুখ পুড়ল তৃণমূলের, নলহাটির সমবায় নির্বাচনে বাজিমাত বাম-কংগ্রেস জোটের

কেষ্ট (Keshto) গড়ে বীরভূমে সমবায় ভোটে (Cooperative Election) ধাক্কা তৃণমূলের (TMC), নলহাটিতে (Nalhati) বাজিমাত বাম-কংগ্রেস (Left-Congress) জোটের (Alliance)।বীরভূমের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক নতুন মোড় এসেছে। এক…

Nalhati Cooperative Election

কেষ্ট (Keshto) গড়ে বীরভূমে সমবায় ভোটে (Cooperative Election) ধাক্কা তৃণমূলের (TMC), নলহাটিতে (Nalhati) বাজিমাত বাম-কংগ্রেস (Left-Congress) জোটের (Alliance)।বীরভূমের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক নতুন মোড় এসেছে। এক সময় যা ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তিশালী গড়, সেই বীরভূমে এবার সমবায় ভোটে বড় ধাক্কা খেল শাসক দল। নলহাটির কয়থা সমবায় (Cooperative) নির্বাচনে তৃণমূলের বিপর্যয়ের মধ্যে বাম-কংগ্রেস জোটের এক চমকপ্রদ জয় উল্লাস তৈরি করেছে। সমবায় সমিতির ৩৭টি আসনের মধ্যে ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট, আর তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন মাত্র ১৭টি আসনে। এটা একদিকে যেমন শাসক দলের জন্য বড় ধাক্কা, তেমনি বিরোধী জোটের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষণও বটে।

নলহাটি (Nalhati) ১ নম্বর ব্লকের কয়থা সমবায় সমিতির নির্বাচন রবিবার অনুষ্ঠিত হয়। ৩,৫৮০ জন ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেন, যেখানে জয়ী বাম সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন রেজিনা বিবি ও অর্চনা মণ্ডল। নির্বাচনের পর তাঁদের বক্তব্য ছিল, “সমবায়ের জমি কেনা নিয়ে বিতর্কের কোনো কমতি ছিল না। আদালতে মামলা হয়েছিল। মানুষ শাসকদলের উপর ভরসা রাখতে পারেনি, আর তারই প্রতিফলন ঘটেছে এই নির্বাচনে।”

   

তৃণমূলের পক্ষে বিপর্যয়: সমবায় সমিতিতে কেন হার?
এই নির্বাচনে তৃণমূলের পতন নিয়ে অনেকেই আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। বীরভূমে তৃণমূলের অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী, বিশেষ করে অনুব্রত মণ্ডল এবং কাজল শেখের যুগলবন্দিতে। পঞ্চায়েত ভোটে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তৃণমূলের, এমনকি লোকসভা নির্বাচনে কাজল শেখের নেতৃত্বে ব্লকে তৃণমূলেরই ছিল লিড। তবে, সমবায় (Cooperative) সমিতির নির্বাচনে এমন ফলাফল কেন হলো, এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোচনা চলছে।

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সঞ্জীব বর্মন এই বিষয়ে বলেন, “১২ বছর পর কয়থা সমবায় (Cooperative) সমিতিতে নির্বাচন হয়েছে, আর সেখানে তৃণমূলের মুখ থুবড়ে পড়া এক বড় রাজনৈতিক বার্তা। আমরা বাম-কংগ্রেসের জোটের পক্ষে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। তৃণমূল রাজ্যে দুর্নীতি করছে, আর সমবায়েও তা ঘটছে। আমরা সমবায়কে দুর্নীতি মুক্ত করতে চাই।” তাঁর কথায় স্পষ্ট, বিরোধীরা এখন মনে করছেন, তৃণমূল সমবায় ক্ষেত্রে জনস্বার্থের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ আরও বলেন, “যদি মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে, তাহলে গোটা রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এমনই ফলাফল হবে। সুতরাং, তৃণমূল সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ভোট দিতে দেয় না।” তাঁর এই মন্তব্যও তৃণমূলের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল, সমবায় ভোটে সন্ত্রাস এবং প্রভাব খাটানো।

বাম-কংগ্রেস জোটের জয়: মানুষের আস্থা ফিরে পেয়েছে
বাম-কংগ্রেস জোটের এই জয়ে শাসক দলের বিপরীতে শক্তিশালী বিরোধী জোটের আবির্ভাব ঘটেছে। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, “যেখানে পরিষ্কারভাবে ভোট হবে, সেখানে বাম-কংগ্রেসের জোটই জিতবে। কারণ, মানুষ এখন বুঝে ফেলেছে যে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে একটি অঘোষিত সমঝোতা রয়েছে।” এই মন্তব্যে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট, যা তৃণমূলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত, বীরভূমে একসময় তৃণমূলের আধিপত্য ছিল, যেখানে অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখের শক্তি ছিল প্রধান। কিন্তু অনুব্রত জেলে যাওয়ার পর থেকে কাজল শেখ নিজেকে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি নানুর থেকে গোটা বীরভূমে নিজের প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং এখন সেখানেই শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত।

সমবায় ভোটে পরাজয়ের পর তৃণমূলের অবস্থান কী হবে?
তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য এবং বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, “কেন এমন ফলাফল হয়েছে, তা দলগতভাবে পর্যালোচনা করা হবে।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতৃত্বে বোঝা যাচ্ছে, তারা নিজেদের পরাজয় নিয়ে ভাবছে এবং ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে চায়।

তৃণমূলের জন্য সমবায় নির্বাচনে (Cooperative Election)এই হার একটি বড় ধাক্কা। যদিও দলীয় ভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা হবে, কিন্তু এই নির্বাচনে তৃণমূলের হারের ফলে বিরোধীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাম-কংগ্রেস জোটের শক্তি বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটঃ
বীরভূমের সমবায় ভোটের (Cooperative Election)ফলাফল রাজ্যের রাজনৈতিক পরিসরে বড় পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তৃণমূল, যা একসময় বীরভূমে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল, সেই দলই এবার রাজনৈতিক মঞ্চে কটাক্ষের শিকার। আর বিরোধী জোটের শক্তিশালী উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাম-কংগ্রেস জোট এখন সেই গুণগত শক্তির প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবে, যা আগামী দিনে আরও বড় নির্বাচনগুলিতে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করবে।

এই সমবায় নির্বাচনের (Cooperative Election) ফলাফল শুধু বীরভূমের জন্য নয়, রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলেও একটি নতুন রাজনৈতিক দিশার সূচনা হতে পারে। তৃণমূলের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা, যে তাদের বর্তমান কর্মপদ্ধতি এবং প্রশাসনিক দক্ষতা আর যেভাবে চলে, সেভাবে দলীয় শক্তি বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। এখন দেখার, ভবিষ্যতে এই হার কিভাবে দলের কৌশলগত পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলবে।