‘কসবার লজ্জা ঢাকতে কলঙ্কিত কার্তিক মহারাজ’, দাবি বিজেপির

কসবা ল কলেজে (Kasba-Scandal) গণধর্ষণে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতা মনোজিতের। এবার তার ই প্রত্যুত্তর দিতে কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে ওঠা ১২ বছর আগের একটি ধর্ষণের অভিযোগ…

Kasba-Scandal trinamul conspiracy against kartik maharaj

কসবা ল কলেজে (Kasba-Scandal) গণধর্ষণে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতা মনোজিতের। এবার তার ই প্রত্যুত্তর দিতে কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে ওঠা ১২ বছর আগের একটি ধর্ষণের অভিযোগ সামনে এনে রাজনৈতিক ঘুটি সাজাচ্ছে তৃণমূল। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রম সংঘের সঙ্গে যুক্ত পদ্মশ্রী সম্মানপ্রাপ্ত সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজ ওরফে স্বামী প্রদীপ্তানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল।

   

অভিযোগকারিণী এক মহিলা দাবি করেছেন, ২০১৩ সাল থেকে তিনি একাধিকবার কার্তিক মহারাজের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যের রাজনীতিতে তীব্র চাপানউতোর শুরু হয়েছে। অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কার্তিক মহারাজ তাঁকে ‘চানাক আদিবাসী আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ে’ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

অভিযোগকারিণী আরও জানিয়েছেন, ভয়ে (Kasba-Scandal) এবং হুমকির মুখে তিনি দীর্ঘদিন নীরব ছিলেন। তিনি বলেন, “কেউ আমাকে প্ররোচনা দেয়নি। আমি নিজের সিদ্ধান্তে এই অভিযোগ দায়ের করেছি।” অভিযোগকারিণী কার্তিক মহারাজের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।

অভিযোগকারিণীর বয়ান অনুযায়ী জানা গেছে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে তাঁকে স্কুলের হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে কার্তিক মহারাজ তাঁকে স্কুলের পাঁচতলায় নিয়ে গিয়ে প্রায় প্রতিদিন ধর্ষণ করতেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে জোর করে গর্ভপাত করানোর অভিযোগও তুলেছেন তিনি।

কার্তিক মহারাজ (Kasba-Scandal) এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমি একজন সন্ন্যাসী। এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ আমার সম্মানহানির জন্য ষড়যন্ত্র।” তিনি দাবি করেছেন, আইনি পথে এর জবাব দেওয়া হবে। তবে এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে কার্তিক মহারাজের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতার কারণে।

গত লোকসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্তিক মহারাজকে তৃণমূল বিরোধী মন্তব্যের জন্য কটাক্ষ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “সব সাধু সমান হয় না।” এর জবাবে কার্তিক মহারাজ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিযোগ বর্তমান সময়ে কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডে ফেঁসে গিয়ে তৃণমূল এই রাকনৈতিক খেলায় মেতেছে।

তৃণমূল কংগ্রেস (Kasba-Scandal) এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। তৃণমূলের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বলা হয়েছে, “বিজেপি যখনই বাংলায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তখনই তাদের পুরো যন্ত্র সক্রিয় হয়ে ওঠে।

Advertisements

কিন্তু তাদের নিজেদের মিত্র, যিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে তারা হঠাৎ সব ভুলে যায়। এমনকি নির্যাতিতাকে লজ্জা দিয়ে, তাঁর কষ্টকে তুচ্ছ করে তাঁর কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করে। বিজেপির নৈতিকতা কেবল নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী বদলায়।”

তৃণমূলের মতে (Kasba-Scandal) “বিজেপি সততার কথা বলে, কিন্তু তাদের মিত্ররা এমন জঘন্য অভিযোগের মুহূর্তেও রক্ষা পায়। এই ঘটনা প্রমাণ করে বিজেপি বাংলার মানুষের আস্থা অর্জনের যোগ্য নয়।” তৃণমূলের দাবি, এই অভিযোগের পেছনে কোনো রাজনৈতিক প্ররোচনা নেই, বরং অভিযোগকারিণী স্বাধীনভাবে তাঁর অভিযোগ তুলেছেন।

অন্যদিকে, বিজেপি এই অভিযোগকে (Kasba-Scandal) ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উড়িয়ে দিতে চাইছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এতদিন পর কেন এই অভিযোগ উঠল? এর পেছনে তৃণমূলের হাত আছে। কার্তিক মহারাজ হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে কথা বলেন, তাই তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “তৃণমূল নিজেদের দুর্নীতি ও ব্যর্থতা ঢাকতে এই ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করছে।”

এই ঘটনা রাজ্যের অন্যান্য সাম্প্রতিক ধর্ষণ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার একটি আইন কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় তৃণমূলের এক প্রাক্তন যুব নেতার নাম জড়িয়েছে। বিজেপি এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, কার্তিক মহারাজের ঘটনায় তাদের নীরবতা তৃণমূলের পাল্টা আক্রমণের কারণ হয়ে উঠেছে।

যাত্রীদের জন্য সুখবর, টিকিট বুকিং সিস্টেমে বড়সড় পরিবর্তন রেলের

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, (Kasba-Scandal) এই ঘটনা আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তৃণমূল এই ঘটনাকে বিজেপির নৈতিক অবস্থান দুর্বল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, যখন বিজেপি এটিকে তৃণমূলের ‘চক্রান্ত’ বলে দাবি করছে।

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, যারা নারী নিরাপত্তা এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলছে। এই ঘটনার তদন্তে পুলিশ কী পদক্ষেপ নেয় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই সংঘাত কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা আগামী দিনে রাজ্যের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নির্ধারণ করবে।