সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে (Kasba-Law-College) এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য। এই জঘন্য ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের গভর্নিং বডি অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যেই কলেজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
গত ২৫ জুন, ২০২৫ তারিখে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে নারী নিরাপত্তার প্রশ্নকে ফের সামনে এনেছে। কলকাতা পুলিশ এই মামলার তদন্তে তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে এবং ঘটনায় জড়িত চারজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। (Kasba-Law-College) তদন্তের জন্য গঠিত বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে কাজ করছে।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, গত বুধবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে কলেজের গার্ড রুমে টেনে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগী ছাত্রী জানিয়েছেন, তাঁকে কলেজে ডেকে এনে এই জঘন্য কাণ্ড ঘটানো হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে একটি গ্রুপে শেয়ার করা হয়েছিল, যা তদন্তকারী দলের হাতে এসেছে।
কলেজের (Kasba-Law-College) সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনার প্রমাণ মিলেছে, যেখানে দেখা গেছে ভুক্তভোগী ছাত্রী আতঙ্কিত অবস্থায় কলেজের গেটে পৌঁছেছিলেন। ফরেনসিক পরীক্ষায় ঘটনাস্থল থেকে ছেঁড়া চুল, ধস্তাধস্তির চিহ্ন এবং অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তদের মেডিকোলিগ্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, (Kasba-Law-College) যিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা এবং কলেজের অস্থায়ী কর্মী, তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। পুলিশি জেরায় মনোজিৎ বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, জানিয়েছেন, “আমার ক্ষমতা সকলেই জানে। ওই মেয়েটাও জানত। আগেও বহুবার করেছি।”
তিনি এফআইআর না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। এছাড়া, জায়েদ আহমেদ, প্রমিত মুখোপাধ্যায় এবং একজন নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মনোজিৎ ২০১৮ সালে ছাত্রীদের হেনস্থার জন্য চার বছরের জন্য কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।
কলকাতা (Kasba-Law-College) পুলিশের বিশেষ তদন্ত দল, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সহকারী কমিশনার প্রদীপ কুমার ঘোষাল, ঘটনার তদন্তে নতুন তথ্য উদঘাটন করছে। প্রাথমিকভাবে পাঁচ সদস্যের এই দল বর্তমানে নয় সদস্যে সম্প্রসারিত হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ফোনের ভিডিও এবং সাক্ষীদের বয়ান সংগ্রহ করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন বিকেল ৪টের পর কলেজে ১৭ জন উপস্থিত ছিলেন, যা একটি ডে কলেজের জন্য অস্বাভাবিক। এই ব্যক্তিদের উপস্থিতির কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন বিজয় সিংহল। তিনি এর আগে আরজি কর মেডিকেল কলেজের ঘটনায়ও মামলা করেছিলেন। আদালতের নজরদারিতে তদন্তের আর্জি জানানো হয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি অর্চনা মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং পুলিশের সঙ্গে তাঁর বাকবিতণ্ডাও হয়েছে।
আবার বিদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী এবার কোন কোন দেশে সফর জেনে নিন
রাজনৈতিক (Kasba-Law-College) মহলেও এই ঘটনা তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মদন মিত্রের বিতর্কিত মন্তব্য, যেখানে তিনি ছাত্রীর একা কলেজে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন, দলের অস্বস্তির কারণ হয়েছে। তৃণমূল তাঁকে শোকজ করেছে। বিজেপি এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যারা সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে রিপোর্ট জমা দেবে।
ছাত্রছাত্রীরা এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন ছাত্র বলেন, “অগাস্টে আমাদের পরীক্ষা। কলেজ বন্ধ থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?” কলেজে আগে থেকেই ক্লাসের অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ ছিল, এই ঘটনা সেই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
ভুক্তভোগীর (Kasba-Law-College) পরিবার কলকাতা পুলিশের উপর ভরসা রেখেছে এবং সিবিআই তদন্তের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা দ্রুত চার্জশিট দাখিল করবে এবং অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করবে। এই ঘটনা শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে।
এই কাণ্ড রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং নারী নিরাপত্তার দুর্বলতাকে প্রকাশ করেছে। আগামী দিনে তদন্তের ফলাফল এবং আদালতের রায় এই মামলার দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।