কলকাতা: কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়। পুলিশের হাতে এসেছে সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টার CCTV ফুটেজ, যেখানে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে ২৫ জুন রাতে আতঙ্কিত অবস্থায় কলেজের গেটে আসছেন প্রথম বর্ষের আইনের ছাত্রী। তালাবদ্ধ গেট দেখে অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। সেই সময় দুই অভিযুক্ত জইব ও প্রমিত তাঁকে জোর করে গার্ডরুমের দিকে নিয়ে যায়। অভিযোগ, সেখানেই ঘটে নির্মম ঘটনা।
‘ম্যাঙ্গো’-র বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি
তদন্তে উঠে এসেছে মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র ওরফে ‘ম্যাঙ্গো’-র বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি। পুলিশি জেরায় সে জানিয়েছে, “আমার কী ক্ষমতা, তা সকলেই জানে। ওই মেয়েটাও জানত। আগে বহুবার করেছি। কিন্তু ও কমপ্লেন করবে ভাবিনি, তাই গুরুত্ব দিইনি।”
মনোজিতের দাবি, বহুদিন ধরেই নির্যাতিতাকে সহবাসের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল সে। ছাত্রী রাজি না হওয়াতেই মনোজিৎ ‘শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার পর সে ফোন করে এক ‘পরিচিত দাদা’-কে যিনি এর আগেও বহুবার তাকে আইনি জটিলতা থেকে বাঁচিয়েছেন বলে দাবি।
‘FIR যেন না হয়’ Kasba Law College Rape Case
তদন্তকারীদের দাবি, ধর্ষণের পর মনোজিৎ ওই ‘দাদা’-কে অনুরোধ করে বলেন, “দেখো, যেন FIR না হয়।” কিন্তু এই প্রথম, সেই ‘দাদা’র কাছ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। তখনই ঘাবড়ে যায় মনোজিৎ।
তবু আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ‘ম্যাঙ্গো’ তার দুই সঙ্গীকে বলে, “চিন্তা করিস না, সব সামলে নেব।” সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের মধ্যে কেউই পালানোর চেষ্টা করেনি। মনোজিৎ নিজেও নিজের বাড়িতেই ছিলেন।
ফোন করে হুমকি, ভিডিও ডিলিটের নির্দেশ
ঘটনার পর নির্যাতিতাকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়। সেই কল রেকর্ড পুলিশের হাতে এসেছে। এমনকি ধর্ষণের ভিডিও ডিলিট করতে বলা হয় জইব ও প্রমিতকে। মনোজিতের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, “সব ভিডিও উড়িয়ে দে।”
কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। নির্যাতিতার সাহসিকতায় পুলিশের কাছে পৌঁছায় সব তথ্য। ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহ করে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে মনোজিৎ, জইব ও প্রমিতকে।
কলেজ চত্বরে অপরাধচক্র?
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে এতদিন কলেজ চত্বরে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছিল? কে সেই ‘পরিচিত দাদা’? তৃণমূলের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ‘ম্যাঙ্গো’র পেছনে কোনও রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী সংস্থা।