আগামী ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বুধবার) রাজ্যজুড়ে পালিত হবে করম পুজো (Karam Puja 2025), আর সেই উপলক্ষে রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করল সমস্ত সরকারি ও সরকারপোষিত অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুরসভা ও পঞ্চায়েত দপ্তরে। অর্থদপ্তরের তরফে ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, ওইদিন পূর্ণদিবস ছুটি থাকবে।
করম পুজো মূলত কুড়মি ও বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া জেলার পাশাপাশি সংলগ্ন ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা ও ছত্তিশগড়ে এই উৎসব বিশেষ জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়।
করম পুজো একটি ঋতুভিত্তিক এবং কৃষিভিত্তিক লোকাচার। এই উৎসব মূলত ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়। যেহেতু এই পুজোর তারিখ প্রতি বছর আলাদা হয়, তাই এটি সাধারণ ছুটির তালিকায় থাকে না। বরাবরের মতো এবারও আলাদা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। উল্লেখ্য, ২০২৩ সাল থেকেই রাজ্য সরকার এই দিনটিকে পূর্ণ দিবস ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা শুরু করে।
করম পুজোর এক বিশেষ দিক হল, উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয় প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই। মহিলারা কংসাবতী, সুবর্ণরেখা বা শিলাবতী নদীর চর থেকে পবিত্র মাটি সংগ্রহ করেন, সেই মাটিতে বিভিন্ন শস্যদানা (ধান, গম, বুট, মুগ, তিল ইত্যাদি) বপন করেন। কয়েকদিন পর সেই শস্য অঙ্কুরিত হলে করম পুজোর দিন সেগুলি করম গাছের পাতা সহ পূজা করে উত্সর্গ করা হয়। এই পূজায় ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় বোনেরা উপবাসও করে থাকেন। পরে দিনভর চলে নাচ-গান, করম গীত, ও সামাজিক মিলন উৎসব।
করম পুজোর সামাজিক তাৎপর্য-ও বিশেষ। এটি একদিকে যেমন কৃষি জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তেমনি ভ্রাতৃত্ববোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও নারীর উৎসর্গের চিত্র তুলে ধরে। আধুনিক সময়ে এই লোকজ উৎসব শুধু গ্রামীণ বা আদিবাসী সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং শহরাঞ্চলেও বহু আদিবাসী ও কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ এই উৎসব পালন করেন।
এই করম পুজোর মধ্য দিয়েই বঙ্গে শারদোৎসবের সূচনা হয় বলে অনেকে মনে করেন। করম ও ভাদু উৎসব মিলিয়ে যেন এক পবিত্র সাংস্কৃতিক প্রস্তুতির সূচনা হয়, যার চূড়ান্ত রূপ দুর্গাপূজায় গিয়ে পৌঁছয়। তাই করম পুজো কেবল ধর্মীয় নয়, এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
এবছর করম পুজোতে ছুটি ঘোষণায় আনন্দে উদ্বেল রাজ্যের আদিবাসী ও কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষজন। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমাদের সংস্কৃতিকে সরকারি স্বীকৃতি ও সম্মান জানানো সত্যিই আনন্দের।’’ অনেকেই রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
উপসংহার:
করম পুজো শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি বাংলার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক। রাজ্য সরকার যেমন ছুটি ঘোষণা করে এই উৎসবকে মর্যাদা দিচ্ছে, তেমনই সমাজের নানা স্তরের মানুষও এখন এই উৎসবের তাৎপর্য উপলব্ধি করছেন। অতএব, করম পুজো ২০২৫ শুধু ছুটি নয়, বাংলার সংস্কৃতির প্রতি এক গভীর সম্মানও।