তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan) ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি ভোটার তালিকা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ২০০৩ সালের পরিবর্তে ২০২৪ সালকে ভিত্তি বছর হিসেবে গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন।
তাঁর (Kalyan) মতে, ২০০৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২০২৪ সালে নির্বাচন হয়েছে, তাহলে কেন ২০০৩ সালকে ভিত্তি বছর হিসেবে ধরা হবে? কেন ২০০৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে নথিভুক্ত হওয়া ভোটারদের বাদ দেওয়া হবে? আমরা এই বিষয়ে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছি।
আমরা ভারতের নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা তাদের উপর ভরসা করি। নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছ ভূমিকার কারণেই গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হতে পারে।”তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল, যার মধ্যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan) ছিলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এই বৈঠকে ভোটার তালিকা প্রস্তুতি এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এই বৈঠকটি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং ভোটার তালিকার সঠিকতা নিয়ে তৃণমূলের উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছেন এবং এই বিষয়ে একটি গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি।
তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন কমিশনের কার্যকলাপ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন তুলেছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দলটি অভিযোগ করেছিল যে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম ঘটেছে। বিশেষ করে, ভোটার তালিকায় একই ইপিআইসি (ইলেকট্ররাল ফটো আইডেন্টিটি কার্ড) নম্বর একাধিক ব্যক্তির নামে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়টি তৃণমূল উত্থাপন করেছিল।
এই বিষয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan) পূর্বে বলেছিলেন, “একই ইপিআইসি নম্বর তিনজন ভোটারের নামে থাকা আইনত অনুমোদিত নয়। আমরা এই বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করছি এবং সংসদে এটি নিয়ে আলোচনা করব।”
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস (Kalyan) পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি আসনের মধ্যে ২৯টি আসনে জয়লাভ করে, যা দলের প্রভাবশালী উপস্থিতি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের শক্তির প্রমাণ। এই নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থীদের মধ্যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan) শ্রীরামপুর আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন। তিনি এই আসনে ২০১৯ সালে বিজেপির দেবজিৎ সরকারকে ৯৮,৫৩৬ ভোটের ব্যবধানে এবং ২০১৪ সালে সিপিএমের তীর্থঙ্কর রায়কে ১,৫২,৫২৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন।
কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan) এই মন্তব্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি তৃণমূলের দৃষ্টিভঙ্গির একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রকাশ। তিনি একদিকে যেমন নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতার উপর ভরসা প্রকাশ করেছেন, তেমনি ভোটার তালিকার প্রস্তুতি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, ২০০৩ সালের তথ্যের পরিবর্তে ২০২৪ সালের তথ্যকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করলে ভোটার তালিকা আরও আধুনিক ও নির্ভুল হবে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
তৃণমূল কংগ্রেসের (Kalyan) এই বৈঠকটি এমন এক সময়ে হলো যখন দলটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছে। এপ্রিল ২০২৫-এ নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে তৃণমূলের দুই সাংসদ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মহুয়া মৈত্রের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছিল, যা বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন। এই ঘটনায় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের অভাব প্রকাশ পায়, যদিও পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই বিষয়টি সমাধান করেছিল।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব, (Kalyan) বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বারবার জোর দিয়েছেন যে দলটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে এই প্রতিশ্রুতি পুনরায় প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার উপর ভরসা করি। তবে, ভোটার তালিকার প্রস্তুতিতে আধুনিক তথ্য ব্যবহার করা প্রয়োজন, যাতে কোনও ভোটার তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন।” এই বৈঠকের পর তৃণমূল কংগ্রেস সংসদে এই বিষয়টি আরও জোরালোভাবে উত্থাপনের পরিকল্পনা করছে।
তেলেঙ্গানা বিস্ফোরণে হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী রেড্ডি, করলেন ক্ষতিপূরণের ঘোষণা
দলটি ইতিমধ্যেই ১৯৩ নোটিশের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও কার্যপ্রণালী নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়াও, দলটি মণিপুর ইস্যু, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, এবং এমজিএনআরইজিএ ও পিএম আবাস যোজনার তহবিল বন্ধের মতো বিষয়গুলি সংসদে উত্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের (Kalyan) সঙ্গে তৃণমূলের এই আলোচনা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে দলের এই অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই নির্বাচনী প্রক্রিয়া সবার জন্য ন্যায্য ও স্বচ্ছ হোক। এটি আমাদের গণতন্ত্রের মূল শক্তি।” এই আলোচনা ভবিষ্যতে ভোটার তালিকা প্রস্তুতি এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।