মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে অনুশোচনা কল্যাণের, কী বললেন তিনি

সম্প্রতি লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) ফের শিরোনামে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে একাধিকবার প্রকাশ্যে ক্ষোভ…

Lawyer Change in CM's Case, Kalyan Bandyopadhyay to Represent Mamata

সম্প্রতি লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) ফের শিরোনামে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে একাধিকবার প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তাঁর কথায় সেই ক্ষোভের সুরে আক্ষেপ মিশেছে এবার। রাখিবন্ধনের দিনে অনুতাপ প্রকাশ করলেন এই বর্ষীয়ান নেতা।

শনিবার, হুগলির কোন্নগরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়িতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “দিদিকে প্রণাম জানিয়েছি। একবার নয়, দিদি তিন বার আশীর্বাদ করেছেন। দিদিকেও অনেক উল্টোপাল্টা বলে ফেলেছি। এটা না বললেই হয়তো ভালো হতো।”

   

তিনি জানান, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দেড় ঘণ্টা দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে সাংসদ স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে, পার্লামেন্ট নিয়ে এখন তাঁর কোনও উদ্বেগ নেই। কারণ, বর্তমানে তিনি একাধিক মামলার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাঁর কথায়, “আগামী ছয় মাস অনেক মামলা হবে। বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস একজোট হয়ে এই মামলা করেছে। দিদির ওপর যে আঘাত আনার চেষ্টা হচ্ছে, সেটা রুখতে হবে।”

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ হয়েছে। কল্যাণ প্রকাশ্যে মহুয়ার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন। পাল্টা মহুয়াও আক্রমণ শানিয়েছিলেন তাঁর দিকে। মুখ্য সচেতক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহুয়ার বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করেছিলেন।

তবে শনিবার তাঁর বক্তব্যে সেই কড়া সুরের বদলে তাচ্ছিল্যের ইঙ্গিত মিলেছে। কল্যাণ বলেন, “আমার এক জুনিয়র অ্যাডভোকেট ভাই আছে। সে আমাকে খুব সুন্দর একটা টেক্সট মেসেজ করেছে। সেটা পড়ে বুঝতে পেরেছি, মহুয়া মৈত্র এখন আমার কাছে কোনও সাবজেক্ট ম্যাটার নয়। আমার এখন অনেক কাজ রয়েছে। অহেতুক আমার সময়, মাথা একটা আননেসেসারি নারীর জন্য নষ্ট করছি। তার জন্য অনেকের কাছেও খারাপ হয়ে যাচ্ছি।”

Advertisements

রাজনৈতিক মহলে এই মন্তব্যকে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, গত কয়েক মাস ধরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব স্পষ্ট ছিল। মমতার একাধিক সভায় তাঁকে দেখা যায়নি। এমনকি দলীয় মঞ্চেও তাঁর মন্তব্য দলনেত্রীকে বিব্রত করেছিল বলে দলের ভিতরে গুঞ্জন ছিল।

তবে কল্যাণের সাম্প্রতিক এই অনুতাপ প্রকাশ ও দিদির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো—দলীয় ঐক্যের বার্তা বলেই মনে করছেন অনেকে। একই সঙ্গে মহুয়া মৈত্র প্রসঙ্গে সরে দাঁড়ানোও একপ্রকার কৌশল বলেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

এখন দেখার বিষয়, এই পরিস্থিতির পরে তৃণমূল কংগ্রেসের ভিতরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভূমিকা কীভাবে পুনর্গঠিত হয়। আগামী লোকসভা অধিবেশন, একাধিক আইনি লড়াই এবং বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার প্রেক্ষাপটে, তিনি দলনেত্রীর পাশে কেমনভাবে দাঁড়ান, সেটাই রাজ্য রাজনীতিতে নজরকাড়া বিষয় হয়ে উঠবে।