তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আবারও প্রকাশ্যে এসেছে (Kalyan Banerjee)। তৃণমূল সাংসদ এবং আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করে জানিয়েছেন, দুই বছর আগে বিজেপি সাংসদ রাজীব প্রতাপ রুডি তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় তিনি দলের সহকর্মীদের সমর্থন না পাওয়ার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এই অভিযোগ তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে। তিনি তৃণমূলের অন্যতম সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ রমেশ বিধুড়ির আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়েও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই মাসের শুরুতে লোকসভায় তৃণমূলের প্রধান হুইপ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন যে ২০২৩ সালে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ‘ক্যাশ ফর কোয়েশ্চেন’ অভিযোগের সময় তিনি তাঁর সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন। সেই সময় বিজেপি সাংসদ রাজীব প্রতাপ রুডি তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন এবং চোখ রাঙিয়েছিলেন।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, এই ঘটনায় তৃণমূলের কোনও সাংসদ তাঁর পাশে দাঁড়াননি। তিনি বলেন, “মহুয়া মৈত্রকে সমর্থন করার জন্য রাজীব প্রতাপ রুডি আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের উপনেত্রী শতাব্দী রায় সেই সময় নীরব ছিলেন। সমাজবাদী পার্টির সাংসদরা আমার কাছে এসেছিলেন, কিন্তু আমাদের একজন সাংসদও আমাকে সমর্থন করেননি।”
তিনি আরও জানান, তিনি এখন রাজীব প্রতাপ রুডির প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ রমেশ বিধুড়ির মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “রমেশ বিধুড়ি মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে যে অশোভন মন্তব্য করেছেন, তা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এটি কি বিজেপির সংস্কৃতি যে তারা একজন মহিলা সাংসদের বিরুদ্ধে এভাবে আক্রমণ করে?” তিনি আরও উল্লেখ করেন, রমেশ বিধুড়ির এই ধরনের আচরণের কারণেই তাঁকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে টিকিট দেওয়া হয়নি।তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আরও প্রকট হয়েছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেও দলের সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন।
সম্প্রতি কসবা ধর্ষণ মামলা নিয়ে তাঁর মন্তব্য মহুয়া মৈত্রের সমালোচনার মুখে পড়ে, যিনি তাঁকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এই ঘটনা দলের দিল্লি শাখায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল, এবং পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে পড়েছিল যে তৃণমূল সুপ্রিমো এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।
তিনি দলের সাংসদদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বন্ধ করে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোনিবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র কুনাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করব এবং সমাধানের চেষ্টা করব। তবে, বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, বিজেপি তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূলের এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, নন্দীগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে বিজেপির ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দলের সাংগঠনিক শক্তিকে দুর্বল করতে পারে।
শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রামে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে, এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অভিযোগ তৃণমূলের জন্য আরও অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে।এদিকে, বিজেপি এই অভিযোগের জবাবে বলেছে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি ভিত্তিহীন এবং তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা।
মুক্তির আগে বিরাট পরিবর্তন বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’-এ
বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলের নেতারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে, আর বিজেপির উপর দোষ চাপাচ্ছে। এটা তৃণমূলের ব্যর্থতা ঢাকার কৌশল।” তিনি আরও দাবি করেন, নন্দীগ্রামে বিজেপির জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যা তৃণমূলের জন্য উদ্বেগের কারণ।কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অভিযোগ এবং তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।