লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান হুইপ পদ থেকে ইস্তফা (Kalyan)দেওয়ার পর শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সহকর্মী এবং কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি মহুয়ার একটি সাম্প্রতিক পডকাস্টে করা ব্যক্তিগত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
কল্যাণ তাঁর বিবৃতিতে বলেন, মহুয়া একজন সাংসদকে “পিগ” (শূকর) বলে সম্বোধন করে অমানবিক ভাষা ব্যবহার করেছেন, যা সভ্য রাজনৈতিক আলোচনার মৌলিক নিয়মের প্রতি গভীর অশ্রদ্ধার উদাহরণ। এই ঘটনা তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে এবং দলের ঐক্যের উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
মহুয়ার মন্তব্য ও কল্যাণের প্রতিক্রিয়া
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিবৃতিতে বলেন, “মহুয়া মৈত্রের পডকাস্টে ব্যবহৃত শব্দচয়ন, যেমন একজন সাংসদকে ‘পিগ’ বলা, শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, বরং এটি রাজনৈতিক আলোচনার মৌলিক শিষ্টাচারের প্রতি অবহেলার প্রকাশ। যাঁরা অপমানজনক ভাষাকে যুক্তির বিকল্প মনে করেন, তাঁদের নিজেদের রাজনৈতিক শৈলী এবং এর ফাঁপা চরিত্রের দিকে কঠোরভাবে নজর দেওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “একজন জনপ্রতিনিধির নামে গালিগালাজ এবং অশোভন ইঙ্গিত শক্তির নয়, বরং নিরাপত্তাহীনতার প্রতিফলন।”কল্যাণ তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করেন যে, তিনি জনসাধারণের জবাবদিহিতা এবং ব্যক্তিগত আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যা প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির মুখোমুখি হওয়া উচিত।
তিনি মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে তিনি তাঁর সমালোচনাকে “নারীবিদ্বেষ” হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “একজন পুরুষ সহকর্মীকে ‘যৌন হতাশাগ্রস্ত’ বলা সাহস নয়, এটি স্পষ্ট অপমান।
যদি এই ধরনের ভাষা কোনো নারীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতো, তবে সারা দেশে ক্ষোভের ঝড় উঠত। কিন্তু পুরুষের বিরুদ্ধে এই ধরনের মন্তব্যকে উপেক্ষা করা হয় বা এমনকি প্রশংসাও করা হয়। এটি একটি বিষাক্ত দ্বৈত মানদণ্ডকে উৎসাহিত করে।”
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সংকট
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা এবং মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে তাঁর প্রকাশ্য বিরোধ তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিভেদকে সামনে এনেছে। সম্প্রতি, নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মহুয়ার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
এই ঘটনায় কল্যাণের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি মহুয়ার প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করেছেন এবং তাঁকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছেন। এই ঘটনার পর তৃণমূলের সিনিয়র সাংসদ সৌগত রায় কল্যাণের আচরণকে “অসভ্য” বলে সমালোচনা করেন এবং তাঁর প্রধান হুইপ পদ থেকে অপসারণের দাবি জানান।
কল্যাণের বিতর্কিত ইতিহাসকল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেও তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য এবং আচরণের জন্য শিরোনামে এসেছেন। ২০২৪ সালে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তিনি একটি কাচের বোতল ভেঙে চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের দিকে ছুঁড়ে মারেন বলে অভিযোগ ওঠে, যার জন্য তাঁকে একদিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।
এছাড়া, তিনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়কে উপহাস করেন এবং বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তর্কে জড়ান। এই ঘটনাগুলি তৃণমূলের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
ভোটার স্লিপ থেকে স্যাট-ফোন, পহেলগাম হামলায় প্রমাণিত পাকিস্তান যোগ
রাজনৈতিক প্রভাব
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা এবং মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র সমালোচনা তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ ঐক্যের উপর প্রশ্ন তুলেছে। বিজেপি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিভেদকে উসকে দিয়েছে। বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য সামাজিক মাধ্যমে কল্যাণ এবং মহুয়ার তর্কের ভিডিও এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট শেয়ার করে দলের দ্বন্দ্বকে প্রকাশ্যে এনেছেন।
তৃণমূলের জন্য এটি একটি সংকটের মুহূর্ত, বিশেষ করে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা এবং মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র আক্রমণ তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতাকে প্রকাশ করেছে। মহুয়ার বিতর্কিত মন্তব্য এবং কল্যাণের প্রতিক্রিয়া দলের শৃঙ্খলা এবং ঐক্যের উপর প্রশ্ন তুলেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলকে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে এবং আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে সভ্য আলোচনার প্রয়োজনীয়তা এবং জনপ্রতিনিধিদের আচরণের মান নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূচনা করেছে।