বর্ধমান, ৫ সেপ্টেম্বর: বাংলার রাজনৈতিক মহল এই মুহূর্তে বেশ উত্তপ্ত (Journalist)। শাসক-বিরোধী দ্বন্দ তো নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। রাজনৈতিক আগুনে পুড়ছেন সাংবাদিকরাও। ঠিক এমন ই ঘটনা ঘটল বর্ধমানে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করার জেরে বর্ধমানের একজন সাংবাদিক এবং তার পরিবারের উপর নৃশংস হামলার ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
শেখ ইমতেয়াজ নামে এক সাংবাদিক, যিনি বর্ধমান ডিজিটাল নিউজ নামক একটি পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত, তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কলহ এবং দুর্নীতি নিয়ে একটি খবর প্রকাশ করার পর তাঁর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এই হামলার পেছনে বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের নির্দেশ রয়েছে বলে অভিযোগ।
এই ঘটনায় শেখ ইমতেয়াজ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা মারধরের শিকার হয়েছেন, এমনকি তাঁকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, সেখ ইমতেয়াজ সম্প্রতি তাঁর নিউজ পোর্টালে বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং দুর্নীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এই প্রতিবেদনে একজন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য নয়ন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং কিছু বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।
এই খবর প্রকাশের ফলে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। এই খবরের জেরেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের রোষানলে পড়েন ইমতেয়াজ। ফলস্বরূপ, গতকাল রাতে খাগড়াগড়ে সেখ ইমতেয়াজের বাড়িতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। তারা বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে, যথেচ্ছ লুটপাট চালায় এবং সম্পত্তি তছনছ করে দেয়।
সৌভাগ্যবশত, হামলার সময় সেখ ইমতেয়াজ এবং তাঁর পরিবার বাড়িতে ছিলেন না, যার ফলে তারা প্রাথমিকভাবে হামলার হাত থেকে রক্ষা পান। কিন্তু বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের খবর পেয়ে তিনি পরিবার নিয়ে খাগড়াগড়ে ফিরে আসেন। এই সময় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালায় এবং ব্যাপক মারধর করে।
অভিযোগ, এই হামলায় সেখ ইমতেয়াজকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে আসা অন্যান্য সাংবাদিকদেরও মারধর করা হয় এবং তাদের মোবাইল ফোন ভেঙে দেওয়া হয়। এই ঘটনা সাংবাদিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরবর্তী হিংসার ঘটনায় তিনি একজন প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।
সিবিআই তাঁকে একাধিকবার দুর্গাপুরের সিবিআই ক্যাম্পে তলব করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, খোকন দাসের নেতৃত্বে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। অনেকেই মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং সাংবাদিক সেখ ইমতেয়াজ ও তাঁর পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “আমি শেখ ইমতেয়াজ এবং তাঁর পরিবারের পাশে রয়েছি। তাঁদের সুরক্ষা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা যথাসাধ্য সহযোগিতা করব।” তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূলের শাসনকালে দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হওয়া ব্যক্তিদের উপর ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় বা পেশা নির্বিশেষে আক্রমণ চলছে। বিশেষ করে ছোট ডিজিটাল নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকরা, যারা দুর্নীতি ও অপকর্মের খবর প্রকাশ করছেন, তারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
মোদী সরকারের জিএসটি নীতিকে ঐতিহাসিক আখ্যা পীযূষ গয়ালের, ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতাকে কটাক্ষ
শেখ ইমতেয়াজের মতো সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশের জন্য নিজেদের জীবন এবং পরিবারের নিরাপত্তার ঝুঁকি নিচ্ছেন। এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সাংবাদিক মহল। কারণ এখনও পর্যন্ত কোনো গ্রেফতারির খবর পাওয়া যায়নি। সাংবাদিক মহল এবং বিরোধী দলগুলি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে।