ওবিসি মামলায় সুপ্রিম স্থগিতাদেশের মধ্যেই জয়েন্টের ফল প্রকাশ বঙ্গে

আজ, ২২ আগস্ট শুক্রবার, পশ্চিমবঙ্গে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার (Joint Exam) ফলাফল প্রকাশিত হতে চলেছে। যা রাজ্যের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উত্তেজনার সৃষ্টি…

Joint Exam

আজ, ২২ আগস্ট শুক্রবার, পশ্চিমবঙ্গে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার (Joint Exam) ফলাফল প্রকাশিত হতে চলেছে। যা রাজ্যের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। দুপুর ২টোর মধ্যে এই ফাইল প্রকাশিত হবে বলে জানা গেছে।

তবে, এই ফলাফল প্রকাশের পটভূমিতে রয়েছে ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার জটিলতা, যা কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক স্থগিতাদেশের ফলে এই ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হয়েছে, যা রাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় স্বস্তি এনেছে।

   

ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলাটি বাংলার শিক্ষা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ২০২৪ সালে কলকাতা হাইকোর্ট ২০১০ সালের পরে জারি করা প্রায় ৫ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের নির্দেশ দেয়। আদালতের মতে, এই শংসাপত্রগুলি বৈধ নিয়ম মেনে ইস্যু করা হয়নি।

নতুন তালিকা তৈরির জন্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস কমিশন অ্যাক্ট ১৯৯৩ অনুযায়ী সমীক্ষা ও বিধানসভার অনুমোদন প্রয়োজন। এই রায়ের ফলে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ এবং কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করে।

২০২৫ সালের জুন মাসে, রাজ্য সরকারের নতুন ওবিসি তালিকার উপর কলকাতা হাইকোর্ট আবারও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে, যা ৩১ জুলাই পর্যন্ত বহাল ছিল। এই নির্দেশে বলা হয়, ২০১১ সালের আগের সংরক্ষণ নীতি (৭ শতাংশ) অনুসরণ করে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।

যদিও রাজ্য ১৭ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণ বজায় রাখতে চেয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হয় এবং অনেক শিক্ষার্থী ভিনরাজ্যের কলেজে ভর্তির দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হন।

সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ২৮ জুলাই ২০২৫-এ সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ হাইকোর্টের নির্দেশকে ‘প্রাথমিকভাবে ভুল’ ও ‘বিতর্কিত’ বলে উল্লেখ করে। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে।

Advertisements

এই স্থগিতাদেশের ফলে রাজ্য সরকার নতুন ওবিসি তালিকার ভিত্তিতে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল প্রকাশের পথ প্রশস্ত হয়। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান, হাইকোর্টের নির্দেশের কারণে ৪০,০০০ শিক্ষক নিয়োগ ও ৯ লক্ষ আসনে ভর্তি প্রক্রিয়া আটকে ছিল।

সুপ্রিম কোর্টের এই স্থগিতাদেশের পর আজ, ২২ আগস্ট ২০২৫, পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড (WBJEEB) ফলাফল প্রকাশ করেছে। এই ফলাফলের মাধ্যমে প্রায় ৩৭,০০০ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ১১,১৭৮ মেডিকেল আসনে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ফলাফল নিয়ে উৎসাহ থাকলেও, অনেকে এখনও ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ রাজ্য সরকারের জন্য একটি অস্থায়ী স্বস্তি হলেও, মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও বাকি। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এ সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে ওবিসি তালিকার বৈধতা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এদিকে, রাজ্যের শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, ২০১১ সালের আগের তালিকা অনুযায়ী ভর্তি প্রক্রিয়া চললেও, নতুন তালিকার ভিত্তিতে সংরক্ষণ বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই বিলম্বের জন্য রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, “এই জটিলতার কারণে অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে বেসরকারি কলেজে বা ভিনরাজ্যে পড়তে যাচ্ছেন, যা তাদের উপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে।” তিনি হাইকোর্টে আরও কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

আকাশে ভারতের তৃতীয় চোখ…শত্রুর প্রতিটি গতিবিধির উপর নজর রাখবে ৬টি AWACS

জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলাফল প্রকাশ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হলেও, ওবিসি সংরক্ষণ মামলার জটিলতা এখনও পুরোপুরি সমাধান হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করলেও, আগামী দিনে আদালতের চূড়ান্ত রায় শিক্ষা ও নিয়োগ ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এখন আশায় রয়েছেন যে, এই জটিলতা দ্রুত সমাধান হবে এবং ভর্তি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।