দীর্ঘ এক বছর কেটে গেলেও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এখনও মেলেনি সুবিচার। সেই ঘটনার প্রতিবাদে এবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া দুর্গাপুজোর অনুদান নিতে অস্বীকার করল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের ৭ ও ১৪ পল্লি সর্বজনীন শারদোৎসব কমিটি (Jaynagar Puja Committees)।
পুজোর আগে এই ঘোষণা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তৈরি করেছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুজোর অনুদান একধাক্কায় ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত বছর অনুদান ছিল ৮৫ হাজার টাকা, এবার তা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু রাজ্যের একের পর এক ক্লাব সেই অনুদান প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদে মুখর হচ্ছে।
জয়নগরের ৭ ও ১৪ পল্লি পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, আরজি কর মেডিক্যালে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বিচার না হওয়ায় তাঁরা রাজ্য সরকারের অনুদান গ্রহণ করবেন না। পুজো কমিটির এক সদস্য বলেন, “এক বছর কেটে গেল। কিন্তু ওই তরুণীর পরিবারের কান্নার জবাব এখনও মেলেনি। সুবিচারের দাবিতে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এবারও রাজ্য সরকারের দেওয়া অনুদান নেব না।” কমিটির তরফ থেকে প্রশাসনকে এ বিষয়ে জানানো হবে বলেও তাঁরা স্পষ্ট করেছেন।
গত বছর পুজোর কিছুদিন আগেই রাজ্য তথা গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ভয়াবহ ঘটনায়। তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। দেশের নানা প্রান্তে, এমনকি বিদেশেও প্রতিবাদ হয়। রাজ্যের বহু পুজো কমিটিও রাজ্য সরকারের আর্থিক অনুদান প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
এক বছর পরেও সেই আন্দোলনের আগুন এখনও জ্বলছে। রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা সেই ক্ষোভ আরও উসকে দিচ্ছে। কসবার ল’ কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ, নদিয়ার কালীগঞ্জে বিস্ফোরণে তামান্না নামে এক শিশুর মৃত্যু — সব মিলিয়ে রাজ্যের নারী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই প্রেক্ষিতেই ফের প্রতিবাদে শামিল হচ্ছে রাজ্যের একাধিক পুজো কমিটি। এর আগে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বিদ্রোহী ক্লাব, নদিয়ার রানাঘাটের ৪ নম্বর পল্লি দুর্গোৎসব কমিটি অনুদান না নেওয়ার কথা জানায়। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের দুই ক্লাব।
এদিকে ৯ আগস্ট ‘অরাজনৈতিক নবান্ন অভিযান’-এর ডাক দিয়েছেন নিহত তরুণীর বাবা-মা। তাঁদের দাবি, “সুবিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। মেয়ের আত্মার শান্তির জন্য এই লড়াই জারি থাকবে।”
গত বছর উমা এসেছিল, কিন্তু তার আগেই চলে গিয়েছিল মেয়েটি। এবারও উমা আসবে, কিন্তু সেই মা এখনও কাঁদছে। এই আবহে পুজোর আনন্দের উৎসবকে প্রতিবাদের মঞ্চ করে তুলছেন বহু ক্লাব। রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এই বার্তা ইতিমধ্যেই বড় দাগ কাটছে।
একদিকে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমুখী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে পুজোর অনুদান বাড়ানো, অন্যদিকে নাগরিক সমাজ ও ক্লাবগুলোর প্রতিবাদ — ২০২৬-এর ভোটের আগে মমতা সরকারের কাছে এই চিত্র নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর।