জামতারা গ্যাংয়ের জাল বর্ধমানে, দিল্লি পুলিশের হাতে গ্রেফতার ৩

বিহারের কুখ্যাত জামতারা গ্যাং-এর (Jamtara Gang) তিন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে গ্রেফতার করল দিল্লি পুলিশের সাউথ ওয়েস্ট ডিস্ট্রিক্ট সাইবার ক্রাইম থানার একটি বিশেষ দল। বর্ধমান থানার সহযোগিতায়…

Jamtara Gang Busted in Burdwan

বিহারের কুখ্যাত জামতারা গ্যাং-এর (Jamtara Gang) তিন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে গ্রেফতার করল দিল্লি পুলিশের সাউথ ওয়েস্ট ডিস্ট্রিক্ট সাইবার ক্রাইম থানার একটি বিশেষ দল। বর্ধমান থানার সহযোগিতায় এই অভিযান চালিয়ে বর্ধমান শহরের শরীফনগর এলাকা থেকে অভিযুক্তদের হেফাজতে নেয় দিল্লি পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতরা জামতারার কার্মাটাঁড় মন্ডল মডিউলের সক্রিয় সদস্য এবং সাইবার অপরাধমূলক কার্যকলাপে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত। এরা বিভিন্ন মোবাইল নম্বর ও অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে দেশের নানা প্রান্তে মানুষকে ঠকিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। ধৃতদের নাম রবি মন্ডল, রমেশ কুমার মন্ডল ও মহেন্দ্র কুমার মন্ডল। তাদের মধ্যে রবি মন্ডলের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের জামতারার সিয়াটার গ্রামে, রমেশ কুমারের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের মার্গোমুন্ডা থানা এলাকায় এবং মহেন্দ্র কুমার মন্ডলের বাড়ি গিরিডি জেলায়।

   

এই তিন অভিযুক্তের কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে দুটি ল্যাপটপ, আটটি মোবাইল ফোন, ২৬টি সিমকার্ড, একটি স্কলার ডিভাইস এবং প্রায় ৪০ হাজার টাকা নগদ। এই সমস্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করে তারা প্রতারণামূলক কাজকর্ম চালাত বলে সন্দেহ পুলিশের। দিল্লি পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩১৮(৪) ও ৩১৯(২) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। পাশাপাশি, ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে গত শুক্রবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়।

এই মামলার সূত্রপাত হয়েছিল ১২ মে, যখন দিল্লির সাউথ ওয়েস্ট ডিস্ট্রিক্ট সাইবার ক্রাইম থানায় এক নাগরিক সাইবার প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। এফআইআর নম্বর ২৭/২৫ অনুযায়ী মামলা রুজু হলে তদন্তে নামে দিল্লি পুলিশের এসআই অমিত কুমার-এর নেতৃত্বে গঠিত একটি চার সদস্যের বিশেষ দল। প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পেয়ে তারা প্রথমে কলকাতার নিউটাউন এলাকায় অভিযান চালায়, যদিও সেখান থেকে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।

পরে নির্দিষ্ট সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে গিয়ে তারা জানতে পারেন, অভিযুক্তরা বর্তমানে বর্ধমানের শরীফনগরে আত্মগোপনে রয়েছে। এরপর বর্ধমান থানার সক্রিয় সহযোগিতায় ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন শরীফনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়।

Advertisements

দিল্লি পুলিশের মতে, জামতারা গ্যাং বর্তমানে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তাদের জাল বিস্তার করছে এবং বর্ধমানেও তারা একটি সক্রিয় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। এই চক্র অনলাইন আর্থিক প্রতারণার মাধ্যমে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করে এবং তা পরে ক্যাশ করে নেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের জেরা করে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে এবং এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সদস্যদের ধরতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট, সাইবার অপরাধ দমনে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পুলিশের যৌথ অভিযান কতটা কার্যকর হতে পারে।

বর্তমানে ধৃতদের দিল্লি নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্যাংটির কার্যকলাপ সম্পর্কে আরও বিস্তৃত তথ্য সামনে আসবে বলে আশাবাদী তদন্তকারী অফিসাররা। বর্ধমান জেলাতে এই প্রথম জামতারা গ্যাংয়ের এত বড় রকম সক্রিয় উপস্থিতি পাওয়া গেল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পুলিশের এই পদক্ষেপে সাইবার অপরাধ দমনে বড়সড় সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।