বর্ষায় জলে ডুবে যায় শ্মশান, দুর্ভোগে গ্রামবাসী

স্নেহা ঘোষ, জলপাইগুড়ি: বছরের এই সময়টা মানেই ভারী বৃষ্টি, নদীর জল বেড়ে ওঠা আর পাহাড়ি জলের প্রবাহে প্লাবিত অঞ্চল। কিন্তু এই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের আড়ালেই…

বর্ষায় জলে ডুবে যায় শ্মশান, দুর্ভোগে গ্রামবাসী

স্নেহা ঘোষ, জলপাইগুড়ি: বছরের এই সময়টা মানেই ভারী বৃষ্টি, নদীর জল বেড়ে ওঠা আর পাহাড়ি জলের প্রবাহে প্লাবিত অঞ্চল। কিন্তু এই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে এক গভীর মানবিক সংকট—জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলার কৃষি বাগান এলাকার শ্মশানের দুরবস্থা।

কাঁটাতারহীন এই শ্মশানটি রয়েছে একটি নদীর ধারে, যেখানে প্রতি বর্ষায় নদীর জল এসে শ্মশান চত্বরে ঢুকে পড়ে। ফলে মৃতদেহ দাহের জন্য যেসব পরিবার এই শ্মশানের উপর নির্ভর করেন, তাঁদের জন্য শুরু হয় এক ভয়াবহ দুর্ভোগ।

   

পাঁচ গ্রামের নির্ভরতা, কিন্তু একটিও স্থায়ী পরিকাঠামো নেই
বামনপাড়া, কৃষি বাগান, কাঠের ব্রিজসহ আশেপাশের অন্তত পাঁচটি গ্রামের মানুষ এই শ্মশান ব্যবহার করেন। কিন্তু এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নের আলো থেকে বঞ্চিত। পাকা ছাউনি নেই, বসার কোনও স্থায়ী ব্যবস্থাও নেই। বর্ষায় গোটা শ্মশান জলমগ্ন হয়ে পড়ে, ফলে দাহ করার জন্য মৃতদেহ নিয়ে আসা রীতিমতো যুদ্ধের সমান হয়ে দাঁড়ায়।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, “রাতে যখন কারও মৃত্যু হয়, তখন কাদা মাখা রাস্তায় স্ট্রেচার বা বাঁশে বাঁধা মৃতদেহ নিয়ে আসতে আমাদের পাড়ি দিতে হয় অন্ধকার জলকাদার মধ্যে দিয়ে। সেই যন্ত্রণা কাউকে বোঝানো যায় না।”

অচল সোলার লাইট, নেই কোনও সরকারি নজর
শ্মশানটিতে একটি সোলার লাইট বসানো হয়েছিল, কিন্তু সেটি বেশিরভাগ সময়ই খারাপ থাকে বা জলের নিচে চলে যায়। ফলে রাত্রিকালীন দাহক্রিয়ার সময় আলোবাতির তীব্র অভাব দেখা দেয়। মহিলারা, প্রবীণ মানুষদের পক্ষে এই পরিস্থিতি আরও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, একাধিকবার পঞ্চায়েত ও স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রতিশ্রুতি মিললেও বাস্তবে কিছুই হয়নি। কেউ কেউ নিজের খরচে কিছু মাটি ফেলে রাস্তা মেরামতির চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তা এক মৌসুমি বৃষ্টিতেই ভেসে যায়।

শেষযাত্রার লড়াই কেন?
গ্রামবাসীরা মনে করেন, শেষযাত্রা যেন মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানের হয়। এই শ্মশান শুধু একটি দাহস্থল নয়, এটি এলাকার মানুষদের আত্মিক বিশ্বাসের কেন্দ্র। তাই এই অবহেলা তাঁদের অপমানের সামিল বলেই মনে করেন তাঁরা।

Advertisements

এলাকার মানুষ প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন—

শ্মশানটিতে একটি পাকা ছাউনি নির্মাণ করা হোক

একটি স্থায়ী রাস্তা ও জলনিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক

পর্যাপ্ত আলো, জল ও বসার ব্যবস্থা করা হোক

একজন প্রবীণ স্থানীয় অধিবাসী বলেন, “শেষযাত্রাটুকু যেন একটু শান্তিতে হয়, এইটুকুই দাবি। বারবার বলেছি, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয় না। বর্ষা এলেই যেন মৃত্যু আরেক নতুন যন্ত্রণা নিয়ে আসে।”

এই প্রতিবেদনটি কেবল এক টুকরো অবহেলার গল্প নয়, বরং এটি পশ্চিমবঙ্গের বহু গ্রামের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। যেখানে শ্মশান পর্যন্ত যেতে হয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এখন সময় এসেছে, সরকার ও জনপ্রতিনিধিরা এই বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং অন্তত মৃতদেহের শেষ গন্তব্য যেন সম্মানজনক হয়—তা নিশ্চিত করেন।