কম র‍্যাঙ্ক, তবু ল’ কলেজে ভর্তি ধর্ষণে অভিযুক্ত জাইব! শাসক দলের মদত? বিস্ফোরক বিজেপি

কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতা ল’ কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় গোটা রাজ্য যখন ক্ষোভে ফুঁসছে, তখন সেই ঘটনার এক অভিযুক্ত, জাইব আহমেদের কলেজে ভর্তি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা…

Jaib Ahmed Admission Controversy

কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতা ল’ কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় গোটা রাজ্য যখন ক্ষোভে ফুঁসছে, তখন সেই ঘটনার এক অভিযুক্ত, জাইব আহমেদের কলেজে ভর্তি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে। বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য সোমবার সকালে এক্স (X)-এ একটি পোস্ট করে দাবি করেন—CULET-UG 2024 পরীক্ষায় ২৬৩৪ নম্বর র‍্যাঙ্ক পেয়েও কীভাবে জাইব আহমেদ এই কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেন?

অমিত মালব্যর অভিযোগ

সোমবার সকালে এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ দেওয়া একটি পোস্টে অমিত মালব্য অভিযোগ করেন, “জাইব আহমেদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত দক্ষিণ কলকাতা ল’ কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়, যদিও CULET-UG 2024 পরীক্ষায় তার র‍্যাঙ্ক ছিল মাত্র ২৬৩৪। এই অবস্থায় অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী উচ্চ র‍্যাঙ্ক থাকা সত্ত্বেও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না।”

   

অমিত মালব্য’র প্রশ্ন, “কে জাইব আহমেদকে এই নামী কলেজে আসন দিল? কে তাকে রক্ষা করছে? আমরা উত্তর চাই এখনই চাই।”

তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানিয়ে লেখেন, “এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা যেখানে আইনের শাসন উপহাসের পাত্র, আর অপরাধীদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রক্ষা করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে।”

কী ঘটেছিল? Jaib Ahmed Admission Controversy

২৪ জুন রাতে দক্ষিণ কলকাতা ল’ কলেজ চত্বরে একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, কলেজের এক ২৪ বছর বয়সী ছাত্রীকে কলেজ চত্বরে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে গণধর্ষণ করা হয়।

মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র ওই ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং জোর করে ওই ছাত্রীকে নিরাপত্তারক্ষীর ঘরে নিয়ে যান। সেখানে তিনি ধর্ষণ করেন। তার সহযোগী জাইব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায় ওই সময় ঘরে উপস্থিত ছিলেন এবং ঘটনাটি মোবাইলে ভিডিও করেন। নিরাপত্তারক্ষীকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়।

Advertisements

গ্রেফতার ও মামলা

ঘটনার পর তিন অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, জাইব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রসহ একাধিক ফৌজদারি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

শহর জুড়ে প্রতিবাদ

এই নৃশংস ঘটনার পর গোটা কলকাতায় তীব্র প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজপথে নামছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সমাজ। এই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে গত বছর আগস্টে আর.জি. কর মেডিকেল কলেজে ঘটে যাওয়া সেই মর্মান্তিক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা, যেখানে এক পিজি ছাত্রীকে মেডিকেল হোস্টেলেই হত্যা করা হয়।

রাজনৈতিক চাপানউতোর

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাসক দল ও বিরোধীদের মধ্যে কড়া টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ-রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠনগুলোর ছত্রছায়ায় অপরাধ বাড়ছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে এখনো এই বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

যদিও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, জাইব আহমেদের ভর্তিকে কেন্দ্র করে যেভাবে প্রশ্ন উঠেছে, তাতে বিষয়টি এখন শুধুই আইন-শৃঙ্খলার পরিসরে নেই। এটি এক বৃহত্তর নৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

এই ঘটনা কেবল অপরাধ দমন নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তার প্রশ্নকেও সামনে আনছে। এখন দেখার, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেয় নাকি আবারও ‘নীরবতা’ই তাদের ভরসা হবে?