কলকাতার রাজপথে আজ এক নতুন ধরনের প্রতিবাদের ছবি দেখা গেল (ISF Student)। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর ছাত্র শাখা, স্টুডেন্টস ফ্রন্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবাধ ও স্বচ্ছ ছাত্র নির্বাচনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা হাতে পেইনকিলার ট্যাবলেট নিয়ে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে।
যা তাদের প্রতীকী প্রতিবাদের একটি অনন্য দিক। পুলিশের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি না পেলেও, ছাত্ররা তাদের দাবি তুলে ধরতে রাজপথে নেমেছে। তাদের বক্তব্য, যদি পুলিশের সঙ্গে কোনও সংঘর্ষ বা লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে, তবে তারা পেইনকিলার খেয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবে। এই প্রতীকী পদক্ষেপ কলকাতার ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
প্রতিবাদের পটভূমি
আইএসএফ-এর ছাত্র শাখা দীর্ঘদিন ধরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের অভিযোগ, রাজ্যের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে, যা ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করছে।
স্টুডেন্টস ফ্রন্টের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “ছাত্র নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু রাজ্যের শাসক দলের প্রভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানে এই নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছি।” তাদের দাবি, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ছাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
প্রতীকী পেইনকিলারের তাৎপর্য
এই প্রতিবাদের সবচেয়ে আলোচিত দিক হলো শিক্ষার্থীদের হাতে পেইনকিলার ট্যাবলেট। স্টুডেন্টস ফ্রন্ট জানিয়েছে, এটি তাদের প্রতিবাদের একটি প্রতীকী অঙ্গভঙ্গি। তারা বলছেন, “পুলিশ যদি আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে বা জলকামান ব্যবহার করে, তবে আমরা পেইনকিলার খেয়ে ব্যথা সামলে প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।
আমাদের দাবি কোনওভাবেই থামবে না।” এই প্রতীকী পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের দৃঢ়সংকল্প এবং প্রতিবাদের প্রতি তাদের অটল প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা ইতিমধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একটি এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, “কলকাতায় আইএসএফ-এর ছাত্ররা পেইনকিলার হাতে নিয়ে ছাত্র নির্বাচনের দাবিতে রাস্তায়। এটি একটি শক্তিশালী বার্তা যে তারা দমনের মুখেও পিছু হটবে না।”
প্রতিবাদের বিবরণ
শুক্রবার সকালে কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ মিছিল শ্যামবাজার পর্যন্ত পৌঁছায়। শতাধিক শিক্ষার্থী এই মিছিলে অংশ নিয়েছে, যারা “ছাত্র নির্বাচন চাই, গণতন্ত্র বাঁচাও” এবং “শিক্ষার অধিকার, নির্বাচনের অধিকার” স্লোগান দিয়েছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড এবং ব্যানার প্রদর্শন করেছে, যাতে ছাত্র নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
পুলিশ মিছিলের অনুমতি না দেওয়া সত্ত্বেও, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যায়। তবে, পুলিশ ব্যারিকেড স্থাপন করে মিছিলটিকে শ্যামবাজারের কাছে থামিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ উত্তেজনা ছড়ালেও বড় ধরনের কোনও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
মন্দারমণি থেকে নৃত্য পরিচালক অপহরণ, তদন্তে পুলিশ
পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে যে মিছিলের জন্য কোনও পূর্বানুমতি নেওয়া হয়নি, তাই তারা ব্যারিকেড স্থাপন করে মিছিলটিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে পারে । আইএসএফ-এর স্টুডেন্টস ফ্রন্টের এই প্রতিবাদ কলকাতার ছাত্র আন্দোলনের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। হাতে পেইনকিলার নিয়ে রাস্তায় নামা তাদের দৃঢ়তা এবং সৃজনশীলতার একটি প্রকাশ।
এই প্রতিবাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবিকে নতুন করে সামনে এনেছে। তবে, পুলিশের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিরোধ এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অটল থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এবং এই আন্দোলন আগামী দিনে আরও বড় আকার নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।