হাওড়ায় দুর্ঘটনার কবলে বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি

শুক্রবার রাতে হাওড়ার জাতীয় সড়কে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার কবলে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি (Nawsad Siddique)। দক্ষিণ ২৪…

Nawsad Siddique Survives Major Road Accident in Howrah

শুক্রবার রাতে হাওড়ার জাতীয় সড়কে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার কবলে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি (Nawsad Siddique)। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের এই বিধায়ক দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে ছিলেন, সঙ্গে আরও কয়েকজন যাত্রী উপস্থিত ছিলেন। যদিও গাড়িটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে সৌভাগ্যবশত নওশাদ সিদ্দিকি সহ গাড়ির সকল যাত্রী অক্ষত এবং সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

নওশাদ সিদ্দিকি নিজে শুক্রবার রাতে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “হাওড়ার অঙ্কুরহাটি চেকপোস্টের কাছে আমাদের গাড়ি একটি দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েছে। আমি সহ গাড়ির বাকি সকল অক্ষত অবস্থায় সুস্থ আছি। গাড়িটি অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপনারা কেউ চিন্তিত হবেন না।” এই পোস্টের মাধ্যমে তিনি তার সমর্থক এবং শুভানুধ্যায়ীদের উদ্বেগ কমানোর চেষ্টা করেছেন। তবে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং জাতীয় সড়কের ওই এলাকায় কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখছে।

এই দুর্ঘটনার সময়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ নওশাদ সিদ্দিকি সম্প্রতি ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে সরব হয়েছেন। সম্প্রতি সংসদের উভয় কক্ষে ওয়াকফ বিল পাস হয়েছে এবং তা আইনে পরিণত হয়েছে। এই আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাজ্যের কয়েকটি এলাকায় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়েছে যে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে, এমনকি রেল চলাচলও ব্যাহত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে ওয়াকফ আইন কার্যকর হবে না।

নওশাদ সিদ্দিকি এই ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। শুক্রবারই তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি লিখে রাজ্য বিধানসভায় ওয়াকফ আইন নিয়ে প্রস্তাব আনার দাবি জানিয়েছেন। তিনি এই আইনের বিরুদ্ধে রাজ্যের জনগণের মতামতকে বিধানসভায় তুলে ধরার পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাঁর মতে, এই আইন ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং এর ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে পারে। তিনি রাজ্য সরকারের কাছে এই ইস্যুতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝেই শুক্রবার রাতে নওশাদের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। যদিও তিনি এবং অন্যান্য যাত্রীরা অক্ষত রয়েছেন, তবু এই ঘটনা নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ এটিকে কাকতালীয় বললেও, নওশাদের সমর্থকদের একাংশ মনে করছেন, এই দুর্ঘটনার পিছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তবে পুলিশ এখনও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

Advertisements

নওশাদ সিদ্দিকি ভাঙড়ের একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি স্থানীয় জনগণের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরব থাকেন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারের জন্য কাজ করে চলেছেন। তাঁর এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় বাসিন্দা এবং সমর্থকরা তাঁর সুস্থতার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন, যাতে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটিত হয়।

এই ঘটনা একদিকে যেমন নওশাদ সিদ্দিকির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তেমনই রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে। ওয়াকফ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং এই দুর্ঘটনা একসঙ্গে আলোচনায় এসেছে, যা রাজনৈতিক মহলেও নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। পুলিশের তদন্তের ফলাফলের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আপাতত, নওশাদ সিদ্দিকি এবং তাঁর সঙ্গীদের সুস্থ থাকার খবরই সকলের জন্য স্বস্তির।