ফের উত্তাল বিধানসভা (BJP in Assembly)। বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে বক্তব্য রাখার সুযোগ না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। আর এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা। তাদের প্রতিবাদ এতটাই তীব্র হয় যে স্পিকারকেও বাদানুবাদে জড়াতে দেখা যায়। পরিস্থিতি এমন হয়ে ওঠে যে, শেষ পর্যন্ত স্পিকার মার্শাল ডাকেন। পাশাপাশি, ফালাকাটার বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মনকে সাসপেন্ড করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে স্পিকারের প্রতি অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছে।
এদিনের এই উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে বাজেট অনুমোদনের জন্য হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যের সময়। হিরণ কিছু মন্তব্য করেন, স্পিকারের প্রতি কটাক্ষ করে। স্পিকার তাকে বলেন, ‘এসব বলার কোনো লাভ হবে না।’ এর জবাবে হিরণ বলেন, ‘কিসে লাভ হবে, আর কিসে হবে না, তা আপনি কেন বলছেন?’ এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথার বাদানুবাদ শুরু হয়। এরপর, স্পিকার তার বক্তব্যের নির্ধারিত সময়ের আগেই হিরণের মাইক বন্ধ করে দেন। বক্তৃতা মাঝপথে বন্ধ করার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিজেপি বিধায়করা।
বিজেপি বিধায়কেরা, বিশেষ করে মনোজ ওরাং এবং শঙ্কর ঘোষ, স্লোগান দিতে শুরু করেন। এর মধ্যে, স্পিকার তাদের থামতে বলেন কিন্তু স্লোগান চলতেই থাকে। স্লোগানের পরিপ্রেক্ষিতে স্পিকার মার্শাল ডাকেন এবং মনোজ ওরাকে মার্শালের মাধ্যমে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তখনই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং আরও অনেক বিধায়ক প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। প্রতিবাদ জানিয়ে সব বিজেপি বিধায়করা ওয়াকআউট করে সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে যান।
এই ঘটনায় বিধানসভা চত্বরে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়। বিজেপি বিধায়করা ওয়াকআউটের পর একযোগে স্লোগান দিতে শুরু করেন, এবং স্পিকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, হিরণের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়ার পরও তাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি, যা এক ধরনের অগণতান্ত্রিক আচরণ। হিরণ নিজেও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এভাবে আমাকে বাধা দেওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’ এর পরই দলের অন্যান্য নেতারা তাদের সমর্থনে সোচ্চার হন। বিজেপি নেতারা স্পিকারকে একপেশে এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলে আখ্যা দেন। তারা আরও বলেন, স্পিকার নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা একজন ব্যক্তি হয়ে এমন আচরণ করতে পারেন না।
এদিনের এই উত্তেজনা শুধু বিজেপি নয়, তৃণমূলের মধ্যেও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূলের বিধায়করা ওই ঘটনার পরপরই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংসদীয় শিষ্টাচারের মর্যাদা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।’ তবে, কিছু তৃণমূল বিধায়কের মতে, বিষয়টি একটি সাময়িক উত্তেজনা, যা শিগগিরই শান্ত হবে।
বিজেপি নেতারা স্পিকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, ‘স্পিকার যদি একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি হন, তাহলে কেন তাকে রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতিত্ব করতে দেখা যাচ্ছে?’ তারা দাবি করেন, এটা বিরোধী দলের মতামত বা বিরোধিতা প্রকাশের সুযোগে বাধা দেওয়া, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্লোগান দেওয়া ও ওয়াকআউট করাটাও সংসদীয় শিষ্টাচারের বাইরে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির পর, আগামী দিনগুলোতে বিধানসভা কার্যক্রম আরো টানটান হতে চলেছে, এমনটাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি বিরোধী দলের মধ্যে আরো অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে এবং শাসক দলের প্রতি ক্ষোভ বাড়াতে পারে।
উল্লেখযোগ্য যে, এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে, রাজনৈতিক মহলে এই বিষয়টি ঘিরে নানা আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এখন দেখার বিষয় হলো, ভবিষ্যতে এই ঘটনার পরিণতি কী হয় এবং সংসদের কার্যক্রমে এর প্রভাব কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে।