কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীদের (Kakdwip fisherman) উপর বাংলাদেশি কোস্টগার্ডের বর্বরোচিত আক্রমণ নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশি কোস্টগার্ডের আক্রমণে এক ভারতীয় মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। হামলা থেকে প্রাণে বাঁচলেও ফেরত আসা মৎস্যজীবীরা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত
গত সপ্তাহে কাকদ্বীপ থেকে একটি মৎস্যজীবী দল বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। তারা সীমান্ত অঞ্চলে থাকাকালীন, অভিযোগ অনুযায়ী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি লঞ্চ তাদের ট্রলারে ধাক্কা মারে। ধাক্কার তীব্রতায় ট্রলারের পিছনের অংশ ভেঙে যায় এবং পাঁচজন মৎস্যজীবী সমুদ্রে পড়ে যান। বাকি মৎস্যজীবীরা চারজনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও একজনকে উদ্ধার করতে বাধা দেয় কোস্টগার্ড।
মৎস্যজীবীর মৃত্যু
বেঁচে ফেরা মৎস্যজীবীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ডুবন্ত অবস্থায় থাকা মৎস্যজীবীকে তারা সাহায্য করার চেষ্টা করলেও, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড তা আটকে দেয়। তাদের দাবি, ওই মৎস্যজীবীকে ইচ্ছাকৃতভাবে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মৃত মৎস্যজীবীর স্ত্রীরও অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলেছে কোস্টগার্ড।
মারধর ও নির্যাতন
বেঁচে ফেরা মৎস্যজীবীরা আরও জানিয়েছেন, কোস্টগার্ডের সদস্যরা তাদের লাঠি দিয়ে মারধর করে। তাদের কথায়, “আমাদের এমনভাবে মারা হয়েছে যে এখনও ঠিকমতো হাঁটতে পারছি না। আমাদের কোনও সাহায্য করার সুযোগই দেওয়া হয়নি।” আঘাতের চিহ্ন এবং শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে তারা ভারতে ফিরেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
সোমবার গঙ্গাসাগরের মঞ্চ থেকে এই ঘটনার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৎস্যজীবীদের সাহসিকতার প্রশংসা করেন এবং এ ধরনের ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখব।”
সীমান্তের উত্তেজনা এবং নিরাপত্তা প্রশ্নে উদ্বেগ
এই ঘটনাটি আবারও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং মৎস্যজীবীদের জীবনের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কাকদ্বীপ এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মৎস্যজীবীরা প্রায়ই আন্তর্জাতিক জলসীমা সংলগ্ন অঞ্চলে মাছ ধরেন। এই অঞ্চলে সীমান্ত নিয়মাবলী সম্পর্কে বিভ্রান্তি এবং দুই দেশের নৌবাহিনীর অতিরিক্ত সক্রিয়তা প্রায়শই উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের তরফ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সীমান্তে এমন ঘটনার ফলে দুই দেশের সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
মৃত মৎস্যজীবীর পরিবারের আর্তি
মৃত মৎস্যজীবীর পরিবার জানিয়েছে, তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। স্ত্রীর দাবি, “আমার স্বামীকে ইচ্ছা করে মারা হয়েছে। আমরা এর সুবিচার চাই। সরকার যেন আমাদের পাশে দাঁড়ায়।”
সরকারি পদক্ষেপ এবং তদন্ত
ঘটনাটি নিয়ে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক জলসীমায় মাছ ধরার সময় দুই দেশের কোস্টগার্ডের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার জন্য উচ্চপর্যায়ে বৈঠক হতে পারে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশি কোস্টগার্ডের হামলায় কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীর মৃত্যুর অভিযোগ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সীমান্ত অঞ্চলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দুই দেশের মধ্যে আরও সমন্বয় প্রয়োজন। মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং সীমান্ত সম্পর্ক উন্নত করতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।