উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ভারী নিম্নচাপের পূর্বাভাস দিল হওয়া অফিস

ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (IMD Forecasts) জানিয়েছে যে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে উত্তর ওড়িশা উপকূলের কাছে একটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপ অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে। এই নিম্নচাপ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে…

IMD Forecasts

ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (IMD Forecasts) জানিয়েছে যে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে উত্তর ওড়িশা উপকূলের কাছে একটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপ অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে। এই নিম্নচাপ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে। আইএমডি’র পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই আবহাওয়া ব্যবস্থা পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে এগিয়ে যাবে, যার ফলে এই অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

এই নিম্নচাপ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন মায়ানমার উপকূলের উপর একটি উচ্চ স্তরের ঘূর্ণায়মান বায়ু প্রবাহের প্রভাবে গঠিত হয়েছে। আইএমডি’র তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি আরও শক্তিশালী হয়ে একটি গভীর নিম্নচাপে রূপান্তরিত হতে পারে এবং পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে পৌঁছাতে পারে। এই নিম্নচাপের সঙ্গে ৭.৬ কিলোমিটার উচ্চতায় একটি ঘূর্ণায়মান বায়ু প্রবাহ রয়েছে, যা দক্ষিণ দিকে হেলে রয়েছে।

   

এই আবহাওয়া ব্যবস্থার প্রভাবে ওড়িশার উপকূলীয় জেলাগুলিতে, বিশেষ করে পুরী, খোর্দা, জগৎসিংপুর, কেন্দ্রাপাড়া এবং ভদ্রক জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আইএমডি’র পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, কিছু এলাকায় ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে, এবং কিছু বিচ্ছিন্ন স্থানে অতি ভারী বৃষ্টিপাত (২০ সেন্টিমিটারের বেশি) হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, উপকূলীয় এলাকায় ৪০-৫০ কিমি/ঘণ্টা গতিবেগে ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে, যা কিছু ক্ষেত্রে ৬০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

ওড়িশা সরকার ইতিমধ্যে উপকূলীয় জেলাগুলির জেলা প্রশাসনকে উচ্চ সতর্কতায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ ত্রাণ কমিশনার (এসআরসি) সমস্ত জেলা কালেক্টরদের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।

নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়াও, মৎস্যজীবীদের আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আইএমডি’র মতে, এই আবহাওয়া ব্যবস্থা সমুদ্রে উত্তাল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে, যা মৎস্যজীবীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

এই নিম্নচাপের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং হাওড়া জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। স্কাইমেট ওয়েদার সার্ভিসেসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নিম্নচাপটি ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ৩ সেপ্টেম্বর প্রবেশ করতে পারে এবং পরবর্তী ছয় দিন

ধরে ওড়িশা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং গুজরাটে সক্রিয় মৌসুমী বৃষ্টির কারণ হবে। তবে, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি যেমন অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক এবং কেরালায় বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাবে।

Advertisements

এই নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি, বিশেষ করে মেঘালয়, আসাম এবং অরুণাচল প্রদেশে তীব্র বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। স্কাইমেটের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই ব্যবস্থাটি বাংলাদেশ এবং সংলগ্ন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হতে পারে, যার ফলে ৩-৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অঞ্চলে তীব্র বৃষ্টিপাত হতে পারে। নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং মিজোরামেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড় গঠনের জন্য পরিচিত, বিশেষ করে মৌসুমী ঋতুতে। এই ধরনের আবহাওয়া ব্যবস্থা প্রায়ই উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি, বন্যা এবং উচ্চ জলোচ্ছ্বাসের কারণ হয়ে থাকে। ১৯৭০ এবং ১৯৯৯ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ওড়িশা এবং বাংলাদেশের উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। এই নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস এবং বন্যার ঝুঁকি থাকায় স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, কৃষকদের ফসল রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এই আবহাওয়া ব্যবস্থার গতিপথ এবং তীব্রতা নিয়ে আইএমডি’র আবহাওয়াবিদরা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছেন।

কাশ্মীরে সিপিএম সংগঠনে ধস, ‘ভূস্বর্গের লালকেল্লা’ কুলগামের পতন আশঙ্কা

এই ঘটনা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের আবহাওয়ার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। স্থানীয় প্রশাসন এবং বাসিন্দাদের এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।