বাংলার পুলিশের দুর্নীতি ও তোলাবাজির ঘটনার অভিযোগ নতুন নয় (Hilsa Poaching)। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মালবোঝাই লরি থেকে টাকা নেওয়া। না দিতে পারলে সেই গাড়ি আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে বহুবার। এবার প্রকাশ্যে এল বঙ্গ পুলিশের ইলিশচুরির ঘটনা। ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু ডায়মন্ড হারবার, যেখানে পুলিশ নিজেই চুরির সাম্রাজ্য বিস্তারে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি ডায়মণ্ড হারবারে ইলিশ মাছের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছোটো ছোটো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা শুধুমাত্র পুলিশের দুর্নীতিরই প্রকাশ নয়, বরং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর জনগণের আস্থার ভয়াবহ ক্ষতিও প্রকাশ করছে।গত কিছুদিন ধরে ডায়মণ্ড হারবারের মাছের আড়ৎ থেকে ইলিশ কিনতে আসা ছোটো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুলিশের তোলাবাজি চলছে বলে অভিযোগ।
প্রতি গাড়ি থেকে ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত তোলা দাবি করা হচ্ছে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে ‘ছোটো ইলিশ সরবরাহ’ করার অজুহাতে মাছ ভর্তি গাড়ি আটকে রাখা হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই ঘটনার একটি চরম উদাহরণ দেখা গেছে মগরা হাট থানার এক পুলিশ আধিকারিক সৈকত রায়ের কাণ্ডে। তিনি একটি ইলিশ মাছ ভর্তি গাড়ি আটক করেন। এবং তাদের কাছ থেকে এক বিশাল অংকেরটাকা চান।
ব্যবসায়ীরা বারবার জানান, তারা কোনো ছোটো ইলিশ কেনেননি, কিন্তু সৈকত রায় তাদের কথায় কান না দিয়ে গাড়িটি আটকে রাখেন। সারাদিন ধরে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনো টাকা আদায় করতে না পেরে বিকেলের দিকে সৈকত রায় নিজেই সেই আটক করা গাড়ির মাছ ডায়মণ্ড হারবারের নগেন্দ্র বাজার মাছের আড়তে বিক্রি করতে যান। কিন্তু সেখানে পৌঁছানো মাত্রই মাছ ব্যবসায়ীরা তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন।
এই ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, এবং তারা তুমুল বিক্ষোভ দেখান। ব্যবসায়ীদের আরও গুরুতর অভিযোগ, গাড়ি থেকে দুটি সিনটেক্স পেটি ভর্তি ইলিশ মাছ ইতিমধ্যেই পুলিশ চুরি করে সরিয়ে ফেলেছে।
মাছ ব্যাবসায়ীদের মতে এই ঘটনা কেবল পুলিশের তোলাবাজির নয়, বরং প্রকাশ্য চুরির প্রমাণ। স্থানীয় বাসিন্দা এবং মৎস ব্যাবসায়ীরা বলছেন পুলিশ, যারা জনগণের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত, তারা নিজেরাই যদি চোর-ডাকাতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তবে জনগণ কোথায় যাবে?
রাস্তায় ট্রাক বা ছোটো বাণিজ্যিক গাড়ি থেকে তোলা আদায় করাই এখন তাদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি, তোলার টাকা দিতে না পারলে গাড়ির মাল চুরি করে বিক্রি করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। এই ‘ডায়মণ্ড হারবার মডেল’ এখন রাজ্যের পুলিশের দুর্নীতির একটি কুখ্যাত প্রতীক হয়ে উঠেছে।
জনগণের মধ্যে এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা শুধু তাদের ব্যবসায় ক্ষতি করছে না, বরং বাজারে ইলিশ মাছের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ছোটো ব্যবসায়ীদের উপর এই তোলাবাজির চাপ তাদের জীবিকাকে বিপন্ন করে তুলছে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অধীনে পুলিশের এই বেলাগাম আচরণ শুধুমাত্র দুর্নীতিরই প্রকাশ নয়, বরং জনগণের প্রতি সরকারের উদাসীনতারও প্রমাণ।