কলকাতা: হাকিমপুর সীমান্তে আবারও ধরা পড়ল এক বিশাল দল অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর (llegal Bangladeshi)। ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (SIR) চলাকালেই আচমকা বেড়ে যাওয়া সীমান্তপথে পালানোর প্রবণতা এবার নিরাপত্তা সংস্থার চোখে পড়েছে প্রবলভাবে।
বিএসএফের সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিনে প্রায় ৫০০ জন অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের ভূখণ্ড ছেড়ে পালাতে গিয়ে পাকড়াও হয়েছে। সংখ্যাটি চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ প্রশাসন দু’পক্ষকেই নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।
নদিয়ায় ভোট শৃঙ্খলা ও প্রস্তুতি পরিদর্শনে অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক
হাকিমপুরের ৮৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা টহলদারির সময় প্রথম সন্দেহ করেন একদল মানুষের অস্বাভাবিক গতিবিধি। কাছাকাছি আসতেই দেখা যায়, বেশিরভাগই ব্যাগপত্রহীন, চিহ্নহীন পথ ব্যবহার করে সীমান্তের দিকে দৌড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আটক করার পর জানা যায়, একজনের কাছেও নেই পাসপোর্ট বা ভিসা বরং দীর্ঘ সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন উপশহরে বেআইনি ভাবে বসবাস করছিল তারা।
বিএসএফের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “সাধারণত দু’-চার জন করে সীমান্ত পেরোবার চেষ্টা করে। কিন্তু এই বছর প্রথমবার একসঙ্গে এত বড় দল আটক করা হল। এরা কারা, কীভাবে এতদিন আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে এখানে বাস করল, তা তদন্তের বিষয়।” আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই স্বীকার করেছেন যে, এ রাজ্যের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল, নির্মাণ সাইট, এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমক্ষেত্রেই তারা কাজ করতেন। কেউ কেউ নকল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভাড়া বাড়িতেও থাকতেন বহু বছর ধরে।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দফতর সূত্রে ইঙ্গিত, ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (SIR) শুরু হওয়ার পরই বাংলা জুড়ে নথি যাচাই—অর্থাৎ পেপার ট্রেইল চেক—জোরদার হয়েছে। বহু পুরনো ভোটার আইডি, রেশন কার্ড এবং সন্দেহজনক ঠিকানা নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হওয়ায় যারা বছর বছর গোপনে থেকে গিয়েছিল, তারা এখন পালানোর চেষ্টা করছে।
একজন আটক হওয়া ব্যক্তি জানিয়েছেন, “বছর ছয়-সাত কাজ করেছি। মাসে টাকা পেতাম, থাকতাম ছোট্ট ঘরে। কিন্তু এখন শুনলাম সবাইকে কাগজ দেখাতে হবে। ধরা পড়ে গেলে জেলে পাঠাবে—এই ভয়ে ফিরতে বেরিয়েছিলাম।”
এই স্বীকারোক্তি নিরাপত্তা সংস্থাকে আরও উদ্বিগ্ন করেছে। কারণ এতে স্পষ্ট, একটি সুপরিকল্পিত অবৈধ নেটওয়ার্ক বহু বছর ধরে এ রাজ্যে অবাধে চালু ছিল, যেখানে মানুষ পাচার, নকল পরিচয়পত্র তৈরি থেকে শুরু করে সরকারি পরিষেবার অপব্যবহার সবই ঘটেছে দীর্ঘদিন।
বিএসএফ মনে করছে, হাকিমপুরে ধরা পড়া ৫০০ জন কেবল বরফের চূড়া। প্রকৃত সংখ্যা আরও বড় হতে পারে, কারণ সঠিক তল্লাশি শুরু হওয়ায় অনেকেই অন্য সীমান্তপথ ধরার চেষ্টা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় নথি যাচাইয়ের জোরালো প্রক্রিয়াই এই তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ।
স্থানীয় মানুষও আতঙ্কিত। এক বাসিন্দা বলেন, “বছরের পর বছর আমাদের মধ্যেই যারা থাকছিল, তারা যে বৈধ নয়—এটা ভেবে অবাক লাগছে। প্রশাসনের আরও আগে নজর দেওয়া উচিত ছিল।” অন্তত আপাতত প্রত্যেককেই স্থানীয় থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। জাতীয়তা যাচাইয়ের পর বাংলাদেশ রওনা দেওয়ার কাগজপত্র তৈরি হবে। তবে শুধু ফেরত পাঠালেই সমাধান নয়—কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দফতর মনে করছে, মূল নেটওয়ার্কটিকে চিহ্নিত করা জরুরি, নইলে ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
