ঠাকুর কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ৫০টির বেশি মূর্তি

মিলন পণ্ডা, তমলুক: আবারও সনাতন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। শুক্রবার গভীর রাতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার অন্তর্গত উত্তর নারকেলদা গণপতিনগর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় এক মৃৎশিল্পীর…

মিলন পণ্ডা, তমলুক: আবারও সনাতন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। শুক্রবার গভীর রাতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার অন্তর্গত উত্তর নারকেলদা গণপতিনগর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় এক মৃৎশিল্পীর ঠাকুর তৈরির কারখানায় দুষ্কৃতিকারীদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় ভেঙে ফেলা হয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি কালী ও লক্ষ্মী দেবীর মূর্তি (Kali and Lakshmi idols)। ঘটনার জেরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার সকালে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।

Advertisements

জানা গিয়েছে, অনিল চাকড়া নামে এক প্রবীণ মৃৎশিল্পীর কারখানায় এই হামলা চালানো হয়েছে। তিনি গত ১৫-২০ বছর ধরে ওই এলাকায় মূর্তি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শুক্রবার রাতেও স্বাভাবিক কাজ শেষে তিনি বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু শনিবার সকালে এসে দেখেন, তাঁর কারখানার প্রায় সমস্ত মূর্তিই ভাঙচুর করে ধ্বংস করা হয়েছে। অনিলবাবু বলেন, “আমার কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। কেন এই হামলা চালানো হয়েছে বুঝে উঠতে পারছি না। অনেক ঠাকুরের অর্ডার নিয়েছিলাম, এখন কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।”

   

ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং বিজেপির নেতৃত্বরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা ভাঙা মূর্তিগুলি রাস্তায় বসিয়ে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কয়েক ঘণ্টার জন্য জাতীয় সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। যাত্রীবাহী বাস থেকে শুরু করে পণ্যবাহী লরিও আটকে পড়ে। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এক ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

বিজেপি নেতৃত্বরা এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং পুলিশকে দ্রুত দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা বামদেব গুছাইত বলেন, “যারা এই হামলা চালিয়েছে তারা যদি ভাবে এটা বাংলাদেশের মতো দুর্বৃত্তদের এলাকা, তাহলে তারা ঐতিহাসিক ভুল করবে। পূর্ব মেদিনীপুর বিপ্লবের মাটি। এই ধরনের কাজ কোনওভাবেই সহ্য করা হবে না। পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সনাতন সমাজকে একত্রিত করে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে বিজেপি।”

একই সুরে আওয়াজ তোলেন তমলুক পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা আশীষ মণ্ডলও। তিনি বলেন, “এই এলাকায় সনাতন সমাজকে বারবার অত্যাচার করা হয়েছে। গতরাতে অনিল চাকড়ার কারখানায় ৪০-৫০টি মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশ মন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।”

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। স্থানীয়দের দাবি, এটি পরিকল্পিত হামলা এবং এর পিছনে বড় কোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

পূর্ব মেদিনীপুরের এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। উৎসবের মরসুমে এই হামলা সনাতন ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত বলেই মনে করছে বিজেপি। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা।