বঙ্গ রাজনীতির মাঠে আবারও এক নতুন উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে শিরোনামে চলে আসা তিক্ত বাকযুদ্ধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য, যেখানে তিনি শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছিলেন, সেটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে পরিস্থিতি আরও গরম হয়ে উঠেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুকে একপ্রকার তাচ্ছিল্য করে বলেন, ‘‘আপনাকে ভবানীপুরে হারাব, আরও ৫ বছর হারার যন্ত্রণা ভোগ করবেন।’’. মমতার এই মন্তব্যের পর শুভেন্দু অধিকারী মাটিতে বসে প্রতিবাদ করেন এবং তিনি পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে মমতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র অপরাধ হল, তিনি ২০২১ সালের নির্বাচনে মমতাকে হারিয়েছিলেন।’’ শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘তাঁর অপরাধ হিন্দুদের ও জনজাতিদের বিরুদ্ধে অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলা, জয় শ্রী রাম ধ্বনি দেওয়া, বন্দেমাতরম বলা।’’
এখানে মমতার কুম্ভ প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কুম্ভকে ‘মৃত্যুকুম্ভ’ বলেছেন, আপনি আগে গামছা দিয়ে ক্ষমা চান, তারপর আমার দিকে আঙুল তুলবেন।’’ এভাবে একের পর এক তীব্র আক্রমণ করে শুভেন্দু মমতাকে চ্যালেঞ্জ জানান, ‘‘আপনাকে ভবানীপুরে হারাব। ৫ বছর ধরে হারের যন্ত্রণা বয়ে বেরাতে হবে।’’ এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল, যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে খোলামেলা সংঘর্ষ প্রকাশ্যে আসে।
শুভেন্দু অধিকারীর আক্রমণের পর মমতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। তিনি মমতাকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘মমতা নিজের দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। তৃণমূলকে ঘেঁটে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করার পর, আবার অন্য দলে যাওয়ার জন্য রিকোয়েস্ট এসেছে।’’ এর মাধ্যমে তিনি মমতার রাজনীতির পদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন।
এদিকে, শুভেন্দু অধিকারীর এক মন্তব্য— ‘‘আপনি পার্সোনাল অ্যাটাক করেছেন, বিরোধী দলনেতাকে অপমানিত করেছেন’’— এটি তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শুভেন্দু আরও দাবি করেন, ‘‘আপনি এমএলএদের এদিক-ওদিক করেও বিধানসভার ভিতরে ভারতীয় জনতা পার্টির সংখ্যা সত্তরের নিচে নামাতে পারছেন না।’’
এই ধরনের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ পরিস্থিতি রাজ্যের রাজনীতির পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিবাদ এবং তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বিজেপি বিধায়করা ওয়াক আউট করে দেয়, যার ফলে রাজ্যের রাজনীতির অস্থিরতা আরও বেড়ে গেছে।
এই পরিস্থিতি যেন এক নতুন দিক নির্দেশ করে, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে একে অপরকে খোঁচা দেওয়ার জন্য নানা ভাষার ব্যবহার বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এখন এক মোড় নেবে, যেখানে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতা সংগ্রাম আরও জোরদার হবে।
এভাবে, এই তিক্ত বাকযুদ্ধ ভবিষ্যতে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশের অস্থিরতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এখন প্রশ্ন উঠছে, এই সংঘর্ষ কাদের স্বার্থ রক্ষা করবে? পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররা আগামী দিনে এর কী প্রতিক্রিয়া জানাবে?