ভরতপুরের মঞ্চ থেকে ফের বিস্ফোরক মন্তব্য তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের। নাম না করে কান্দির তৃণমূল বিধায়ক ও জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকারকে নিশানা করে তিনি বলেন, “লুঠ করে খেয়ে নেতা হবে, আর ভোটের সময় তিন নম্বর, এইসব মানব না।” তাঁর বক্তব্যে মুহূর্তেই দলীয় সভা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
হুমায়ুনের হুঁশিয়ারি
“দল যদি মনে করে আমার মতো অসভ্য ব্যক্তিদের দরকার নেই, তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেখিয়ে দেব মুর্শিদাবাদের রাজনীতির রঙ কীভাবে পাল্টায়,” হুঁশিয়ারিও দেন ভরতপুরের বিধায়ক।
এদিন ভরতপুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “সম্মান দিয়ে নেতৃত্বের জন্য এখনও অপেক্ষা করছি। কিন্তু কেউ যদি লেজে পা দেয়, ছোবল মারতে জানি। আমরা কাউকে আগে আঙুল দেখাব না, কিন্তু কেউ তুললে আমরা দুই আঙুল তুলব। ইট ছুড়লে পাথরে জবাব দেব। এতদিন অনেক কিছু মুখ বুজে সহ্য করেছি।”
ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হিসেব বুঝে নেব
এরপরই অভিযোগের সুরে ফের পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “২০২৩ সালে টাকার বিনিময়ে সালার-ভরতপুরের ওসিকে ব্যবহার করে গণনাকেন্দ্রে কীভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করে যারা জিতেছিল, আমরা জানি। আজ পর্যন্ত সেইসব প্রধানদের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। তারা শুধু জমি লুঠ করতেই ব্যস্ত। আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হিসেব বুঝে নেব। তোমাকে এখানে লুঠ করে খেতে দেব না।”
অপূর্ব সরকারের নাম না করলেও হুমায়ুনের পরোক্ষ আক্রমণ ছিল একেবারে স্পষ্ট—“নেতাগিরি করবে, আর ভোটের বেলায় তিন নম্বর থাকবে—এটা হবে না। কান্দিতে তিন নম্বর, বহরমপুর পুরসভায় তিন নম্বর—তারাই আমাদের নেতা হবে! আমাদের চুল চেপে অর্ডার দেবে, তা আমরা মানব না।”
নতুন দল গঠনের ইঙ্গিত
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন হুমায়ুন কবীর। নতুন দল গঠনের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন, যদিও পরে সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন। তাঁর এই লাগাতার বিতর্কিত মন্তব্যে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের শৃঙ্খলাকমিটি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলে সূত্রের খবর।
এদিন ভরতপুরে এসআইআর-সংক্রান্ত তৃণমূলের ওয়াররুমের উদ্বোধন করেন হুমায়ুন। সেখানেই তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায়, জেলা রাজনীতির অন্তর্দ্বন্দ্ব এখন আর গোপন নয়। দলের ভেতরে একাংশের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব যে ক্রমশ গভীর হচ্ছে, তা প্রকাশ্যে এনে দিল তাঁর আজকের বক্তৃতা।
রাজনৈতিক মহলের মতে, হুমায়ুন কবীরের এই প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের জেলা রাজনীতিতে নতুন অস্বস্তি তৈরি করেছে। মুর্শিদাবাদের রাজনীতির মাটি বরাবরই চঞ্চল, এই বক্তব্য সেই চাঞ্চল্যে আরও আগুন জ্বালাল বলেই অভিমত পর্যবেক্ষকদের।


