ঢাকা: ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের স্রোত এখন উত্তাল ও অস্থির। সীমান্তের ওপারে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ, আর দুই দেশের কূটনৈতিক অস্বস্তির মাঝেই এবার বিতর্কে নাম জড়াল পশ্চিমবঙ্গের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের।
হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে থাকে
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন, যা ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানের পরিপন্থী বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। ঢাকায় গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হুমায়ুন কবীর বলেন, “বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি খুব ভালো। এখানে হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে থাকে। হিন্দুদের উপর অত্যাচারের যে প্রচার চলে, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যে।”
বিধায়ক আরও জানান, কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যাত্রাপথে তিনি একাধিক দুর্গাপুজো দেখতে পেয়েছেন। তাঁর কথায়, “ঢাকায়, কক্সবাজারে, এমনকী ছোট ছোট গ্রামেও পুজো সুন্দরভাবে হয়।”
সফরের নানা মুহূর্তের ছবি শেয়ার Humayun Kabir Bangladesh visit
সেই সঙ্গে নিজের সফরের নানা মুহূর্তের ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করেছেন হুমায়ুন কবীর। কখনও তাঁকে দেখা গিয়েছে মৈত্রী এক্সপ্রেসের সামনে, কখনও পদ্মা সেতু ঘুরে বোটে চড়ে সময় কাটাতে।
তবে এই উচ্ছ্বসিত সফর যে রাজনীতিতে বিতর্কের রেশ ছড়াবে, তা আগেই আঁচ করা যাচ্ছিল। কারণ, ঠিক এই সময়েই ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক কার্যত তলানিতে। শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন আরও প্রকট হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষে সাফাই
ভারতের কূটনৈতিক পরিসরে বারবার অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা হামলার শিকার হচ্ছেন, তাঁদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ধর্মান্তরণের চাপ বাড়ছে। কিন্তু হুমায়ুন কবীরের বক্তব্য একপ্রকার উল্টো বার্তা দিয়েছে—যেন বাংলাদেশের পক্ষেই সাফাই গাওয়া হচ্ছে।
এই মন্তব্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে বিরোধী শিবিরে। ইতিমধ্যেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, “তৃণমূল কি এখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে?” যদিও দলীয়ভাবে তৃণমূল এখনই কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, হুমায়ুন কবীরের ‘আচরণ’ নিয়ে আগেও শীর্ষ নেতৃত্ব অসন্তুষ্ট ছিল। একাধিকবার দলীয় লাইনের বাইরে মন্তব্য করে তিনি বিতর্ক ডেকেছেন। এই ঘটনার পর আবারও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ মহলের জল্পনা।
তবে হুমায়ুন কবীর আপাতত নিশ্চিন্ত। বাংলাদেশের মাটিতে খোশ মেজাজেই সময় কাটাচ্ছেন তিনি—যেখানে তাঁর কথায়, “সম্প্রীতির বাতাস এখনো জীবন্ত।”