মুর্শিদাবাদে আবারও চড়ছে রাজনৈতিক তাপমাত্রা। আগামী ৬ ডিসেম্বর, অর্থাৎ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩ বছর পূর্তির দিনেই, বেলডাঙায় নতুন করে ‘বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর’ স্থাপন করতে চলেছেন তৃণমূলের বিদ্রোহী বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। অনুষ্ঠান উপলক্ষে এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে পোস্টারও পড়ে গিয়েছে—যা ঘিরে ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
হুমায়ুন কবীর নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, “৬ ডিসেম্বর বেলডাঙায় আমরা বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করব।”
তবে এই মন্তব্য নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সম্পূর্ণ নীরব। দলীয় নেতৃত্বের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
বাবরি ইস্যুতে নতুন অগ্নিপরীক্ষা—বিজেপির তীব্র বিরোধিতা
প্রথম দিন থেকেই এই মসজিদ তৈরির উদ্যোগকে ঘিরে ছিল বিতর্ক। এবার পোস্টার প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি তা সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেছে।
বিজেপি মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া কঠোর ভাষায় বলেছেন, “সারা দেশ রামমন্দির নির্মাণের আনন্দে মগ্ন। ঠিক সেই সময়েই বাবরি মসজিদ তৈরির ঘোষণা—এটা হিন্দুদের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ।”
বঙ্গ বিজেপিও সমান স্বর তুলেছে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এই ঘটনাকে বাংলার হিন্দুদের সতর্কবার্তা হিসেবে নেওয়া উচিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকেরা হিন্দুদের ভয় দেখাতে ও সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছে।”
বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আরও স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন, “ভারতে কোনও মসজিদ তৈরিতে বাধা দেওয়া হয় না। কিন্তু বাবরি মসজিদ তৈরির কথা তোলা মানেই আমাদের আন্দোলনের বিরোধিতা। বাবর ছিলেন আক্রমণকারী—তাঁদের কখনও দেশের মানুষ সম্মান করবে না।”
রাজনৈতিক বার্তাই কি লক্ষ্য? বাড়ছে চাপানউতর Humayun Kabir Babri Masjid Dec 6
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল। সেই ঘটনাকে সামনে রেখে ২০২৫-এর একই দিনে নতুন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। হুমায়ুন কবীর দাবি করেছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যেই নির্মাণ সম্পূর্ণ হবে।
তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব, ‘নিজস্ব দল’-এর ইঙ্গিত
দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই হুমায়ুন কবীরের সম্পর্ক ঠান্ডা। একাধিকবার তাঁকে শোকজ করা হলেও তিনি দলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগকে পাত্তা দেননি।
সাম্প্রতিককালে তিনি নিজস্ব দল গঠনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তবু তৃণমূল এখনও তাঁকে বহিষ্কার করেনি, যা নিয়ে জল্পনা আরও গভীর হচ্ছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, “বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর ঘিরে হুমায়ুনের এই অবস্থান শুধু ধর্মীয় আবেগ নয়—বরং তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান এবং দলের সঙ্গে দূরত্বকে আরও প্রকট করছে।”
