জামার স্তূপে কঙ্কাল! নিখোঁজ স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যু ঘিরে রহস্য

নাগেরবাজার: কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ এক স্কুল শিক্ষিকার কঙ্কাল (Human Skeleton) উদ্ধার ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তর কলকাতার নাগেরবাজারের এমসি গার্ডেন রোড এলাকায়। বছর ৫৭-র…

18 People Arrested in Maheshtala Akra Clash Incident

নাগেরবাজার: কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ এক স্কুল শিক্ষিকার কঙ্কাল (Human Skeleton) উদ্ধার ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তর কলকাতার নাগেরবাজারের এমসি গার্ডেন রোড এলাকায়। বছর ৫৭-র সুপর্না ধারা নামে এক মহিলার হদিস মিলছিল না গত নভেম্বর মাস থেকে। ওই এলাকাতেই তিনি ছোট একটি প্রাইমারি স্কুল চালাতেন। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন বলে জানা গেছে।

প্রথমে অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো তিনি আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে বা কোথাও বেড়াতে গেছেন। কারণ এর আগেও এমন হঠাৎ করে কিছুদিনের জন্য উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল তাঁর সঙ্গে। কিন্তু এবার বিষয়টা ছিল আলাদা। কারণ, গত ছয় মাস ধরে তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে পারেনি।

   

স্থানীয়রা জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম বাড়িটি থেকে একটি পচা গন্ধ পেতে শুরু করেন তাঁরা। সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা নাগেরবাজার থানায় অভিযোগ জানান। পুলিশ এসে তল্লাশি চালায়, তবে কিছু খুঁজে পায়নি। কোনো দেহও মেলেনি তখন।

এরপর বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। গতকাল, অর্থাৎ শুক্রবার, সুপর্না দেবীর এক দিদি এসে নাগেরবাজার থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তাতেই নতুন করে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। শনিবার পুলিশ আবারও সেই বাড়িতে পৌঁছে তল্লাশি অভিযান চালায়।

এইবারের অভিযানেই রহস্য উন্মোচিত হয়। বাড়ির একটি ঘরে আলমারির পাশে কাপড়ের স্তূপে চাপা দেওয়া অবস্থায় দেখা যায় একটি মানুষের হাত। তৎক্ষণাৎ পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের খবর দেয়। পরে কাপড় সরিয়ে একটি সম্পূর্ণ কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, আপাতত দেহাবশেষটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ টেস্ট এবং অন্যান্য মেডিক্যাল পরীক্ষা করে দেখা হবে এটি আদৌ সুপর্না ধারার দেহ কিনা।

Advertisements

যদিও স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে সুপর্না দেবীর পরিবারের সদস্যদের অনুমান, এটি নিখোঁজ হওয়া সুপর্না দেবীরই কঙ্কাল। তাঁদের দাবি, তিনি কখনো কাউকে কিছু না জানিয়ে দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে থাকতেন না।

এই ঘটনায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। যদি এটি খুন হয়, তাহলে কীভাবে তাঁকে হত্যা করা হল? কে বা কারা এই ঘটনা ঘটাল? আর যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকে, তাহলে এতদিন কেন দেহটি খুঁজে পাওয়া যায়নি?

প্রসঙ্গত, সুপর্না দেবী নিঃসন্তান ছিলেন। স্বামীও প্রায় ১০ বছর আগে মারা গিয়েছেন। তিনি একাই থাকতেন ওই বাড়িতে। তাঁর তেমন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু ছিল না, যারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।

এখন গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সন্দেহজনক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ খতিয়ে দেখছে, এটি আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা, না কি পরিকল্পিত খুন। পুলিশ পাশের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ, ফোন কল রেকর্ড ও ব্যাংক লেনদেন খতিয়ে দেখছে।

স্থানীয়দের একাংশের মতে, এতবড় রহস্যের পিছনে কেউ সুপরিকল্পিতভাবে সত্য লুকিয়ে রাখতে চেয়েছে। এখন অপেক্ষা কেবল ফরেনসিক রিপোর্টের। সেটাই জানাবে, ছয় মাস আগে যে মহিলা নিখোঁজ হয়েছিলেন, তিনি কীভাবে অদৃশ্য হলেন এবং তাঁর পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকল।