পুজোর মরশুম পেরিয়ে কলকাতার গণপরিবহন ব্যবস্থায় আসতে চলেছে বড়সড় পরিবর্তন। হাওড়া-শিয়ালদা রুটে সরকারি বাস পরিষেবা আগামীদিনে উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হবে। পরিবহন দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, চলতি সপ্তাহে শিয়ালদা-এসপ্ল্যানেড মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার পর যাত্রীদের চাপ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। মেট্রোর নতুন রুটে সেক্টর ফাইভ থেকে সরাসরি হাওড়া পর্যন্ত সংযোগ স্থাপিত হওয়ায় বহু অফিসযাত্রী আর বাস ধরার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন না। এই প্রেক্ষাপটেই হাওড়া-শিয়ালদা শাটল বাস পরিষেবার সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার জানান, “হাওড়া-শিয়ালদা রুটে যাত্রী সংখ্যা কমে গিয়েছে। তাই এখানে অতিরিক্ত বাস চালানোর দরকার নেই। এই রুটে যেসব বাস এতদিন চলত, সেগুলি আমরা সেই সমস্ত রুটে সরিয়ে দেব যেখানে এখনও পর্যাপ্ত বাস পরিষেবা দেওয়া যায়নি।” অর্থাৎ রুট পারমিট বদল করে আগামী দিনে শহরের অন্যান্য এলাকায় বাস পরিষেবা জোরদার করা হবে। এর ফলে অফিসযাত্রী ও সাধারণ মানুষ আরও সহজে গণপরিবহন ব্যবস্থার সুবিধা পাবেন।
এদিকে, কলকাতার পরিবহন কাঠামো নিয়ে মন্ত্রী ট্রাম পরিষেবা সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে শহরের পরিবেশবান্ধব পরিবহনের প্রতীক ট্রাম পরিষেবা নিয়ে বিতর্ক চললেও মন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, আধুনিক নগরপরিবহনে ট্রাম চালানোর ক্ষেত্রে সরকারের আগ্রহ কমছে। স্নেহাশীষবাবু বলেন, “ট্রামের জন্য যানজট বাড়ছে। রাজ্য সরকার ট্রাম চালাতে চায় না। হাইকোর্টে আমরা জানিয়ে দিয়েছি যে আধুনিক পরিবহনে মন্থর গতির ট্রামের কোনও বাস্তব ব্যবহার নেই। তবে ঐতিহ্য রক্ষার্থে কিছু ট্রাম রাখা হবে। মানুষ সেই ট্রামে ‘জয় রাইড’ করতে পারবেন।”
ট্রামপ্রেমী ও শহরবাসীদের মধ্যে এই ঘোষণাকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকের মতে, কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রাম পুরোপুরি বন্ধ না হলেও এর নিয়মিত পরিষেবা কমে গেলে শহরের ঐতিহাসিক চরিত্রের উপর প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে, পরিবহন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, দ্রুত ও সময়নিষ্ঠ পরিবহন ব্যবস্থার জন্য মেট্রো ও বাস পরিষেবা বাড়ানোই এখনকার সময়ের প্রয়োজন।
পরিবহন দপ্তরের এই নতুন পরিকল্পনায় বোঝা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার এখন মেট্রোর পরিকাঠামোকে কেন্দ্র করে গণপরিবহনের রূপরেখা পুনর্গঠন করছে। শিয়ালদা-এসপ্ল্যানেড মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ায় সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া পর্যন্ত সরাসরি মেট্রো সংযোগ হয়েছে, যা বহু নিত্যযাত্রীর যাতায়াত আরও সহজ করেছে। এই পরিস্থিতিতে হাওড়া-শিয়ালদা রুটে প্রতিদিন এত সংখ্যক বাস চালানোর আর প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছেন কর্তারা।
কলকাতার যানজট কমাতে এবং গণপরিবহনকে আধুনিক রূপ দিতে মেট্রো নেটওয়ার্কের বিকাশকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, যেখানে এখনও পর্যাপ্ত বাস পরিষেবা পৌঁছায়নি, সেখানে হাওড়া-শিয়ালদা রুট থেকে কমানো বাসগুলি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। অর্থাৎ যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রেখেই গণপরিবহন ব্যবস্থার ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।
সব মিলিয়ে বলা যায়, পুজোর মরশুমের পর কলকাতার পরিবহন ব্যবস্থায় আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। মেট্রোর বিস্তৃত নেটওয়ার্ক শহরবাসীর যাতায়াতে নতুন দিশা দিচ্ছে, আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাসের রুটবদল এবং ট্রাম পরিষেবার পুনর্গঠন শহরের ভবিষ্যৎ পরিবহনের নকশা তৈরি করছে।