নবান্ন অভিযানকে ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই স্তব্ধ হয়ে যায় কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত সেতু হাওড়া ব্রিজ (Howrah Bridge)। ভোর থেকেই পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ শুরু করে, আর সকাল পেরোতেই সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেতু দিয়ে বাস চলাচল। এর ফলে হাওড়া ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে পড়ে লম্বা যানজট, আর বিপাকে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী।
কলকাতায় ঢোকার অন্যতম প্রধান প্রবেশপথ হওয়ায়, প্রতিদিন হাওড়া ব্রিজের উপর দিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। হাওড়া থেকে বড়বাজার, শিয়ালদহ, ডালহৌসি, ধর্মতলা—সবই এই সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত। কিন্তু শনিবার সকালে সেই সেতুই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায়, গন্তব্যে পৌঁছাতে চরম সমস্যায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায়, অনেককেই বাধ্য হয়ে হেঁটে পার হতে হয়েছে হাওড়া ব্রিজ। গরমে তেতে ওঠা রোদের মধ্যে বয়স্ক, শিশু এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের পক্ষে এই পথ চলা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। এক যাত্রী বলেন, “প্রায় আধ ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে। গরমে ঘেমে-নেয়ে একেবারে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।”
যাঁরা বিকল্প হিসেবে মেট্রো বেছে নিয়েছেন, তাঁদেরও স্বস্তি মেলেনি। হাওড়া মেট্রো স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে সকাল থেকেই তৈরি হয় দীর্ঘ লাইন। কাতারে কাতারে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকায় যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় বেড়ে যায় দ্বিগুণ। মেট্রোতে ঠাঁসা ভিড়ের কারণে অনেককেই একাধিক ট্রেন ছাড়তে হয়েছে।
শনিবারের নবান্ন অভিযান মূলত আরজি করে ডাক্তারি পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত হয়। ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল রাস্তায় নামে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আগেই কলকাতা পুলিশ বেশ কয়েকটি রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা করেছিল।
কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবার ভোর ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যান চলাচলে বিধিনিষেধ থাকবে। তালিকায় হাওড়া ব্রিজের পাশাপাশি বিদ্যাসাগর সেতু, খিদিরপুর রোড, তারাতলা রোড, গার্ডেনরিচ রোড, হাইড রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, আরআর অ্যাভিনিউ, রেড রোড, ডাফরিন রোড, মেয়ো রোড, এজেসি বোস রোড, এসএন ব্যানার্জি রোড, এমজি রোড, ব্রেবোর্ন রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
হঠাৎ করে ব্রিজ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান নিয়ন্ত্রণের কারণে বহু মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকে অভিযোগ করেন, যথাযথ বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা আগে থেকে জানানো হয়নি, ফলে নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
যানবাহন বন্ধের কারণে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা, অফিসগামী কর্মীরা, এমনকি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন এমন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রাও বিপাকে পড়েন। এক অফিসগামী জানান, “সাধারণত বাসে ২০ মিনিটে পৌঁছে যাই। আজ এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে, তাও হাঁটতে হয়েছে।”
নবান্ন অভিযানকে ঘিরে হাওড়া ব্রিজ ও কলকাতার একাধিক রাস্তায় যান চলাচল বন্ধের প্রভাব ছিল ব্যাপক। একদিকে প্রতিবাদের কর্মসূচি, অন্যদিকে যাতায়াতের অসুবিধা—এই দুইয়ের চাপে পড়ে শনিবার দিনটি ছিল সাধারণ যাত্রীদের জন্য এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে রাত অবধি সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের একাংশ।