নতুন ওবিসি তালিকার উপর ঐতিহাসিক রায় কলকাতা হাইকোর্টের

কলকাতা হাইকোর্ট (high-court) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সরকারের প্রস্তুত করা নতুন অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) তালিকায় ৭৬টি মুসলিম শ্রেণির অন্তর্ভুক্তির উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে।…

high-court stay order on obc list

কলকাতা হাইকোর্ট (high-court) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সরকারের প্রস্তুত করা নতুন অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) তালিকায় ৭৬টি মুসলিম শ্রেণির অন্তর্ভুক্তির উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে। (high-court) এই ঐতিহাসিক রায়কে বিচার বিভাগের একটি বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা রাজ্য সরকারের সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে সাংবিধানিক নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগ সমতা ও ন্যায়ের নীতি বজায় রেখেছে এবং ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির জন্য সংরক্ষণ নীতির অপব্যবহার রোধ করেছে।

মমতা সরকারের ওবিসি তালিকা নিয়ে বিতর্ক

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার নতুন ওবিসি তালিকায় প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলিম শ্রেণির অন্তর্ভুক্তি করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে(high-court)। এই তালিকায় মোট ৭৬টি নতুন মুসলিম শ্রেণিকে ওবিসি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যা স্থানীয় হিন্দু এবং অন্যান্য অ-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপটি সংবিধানের সমতা ও ন্যায়ের নীতির সরাসরি লঙ্ঘন এবং স্পষ্টতই ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির একটি প্রকাশ।

   

২০১০ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার আগে, পশ্চিমবঙ্গের ওবিসি (high-court) তালিকায় মুসলিম শ্রেণির অন্তর্ভুক্তি ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে এই সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ঐতিহাসিকভাবে অনগ্রসর হিন্দু এবং অন্যান্য অ-মুসলিম সম্প্রদায়কে পিছিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই সম্প্রদায়গুলো দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে এবং তাঁদের জন্য সংরক্ষণ নীতির মাধ্যমে সুবিধা প্রদানের প্রয়োজন ছিল।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ (high-court)

কলকাতা হাইকোর্টের (high-court) এই স্থগিতাদেশ এসেছে একটি জনস্বার্থ মামলার (পিআইএল) প্রেক্ষিতে, যেখানে নতুন ওবিসি তালিকার স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। আদালত মনে করেছে, এই তালিকা প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং এটি সাংবিধানিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিচারপতি জানিয়েছেন, নতুন তালিকার বৈধতা নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত এটি কার্যকর করা যাবে না। এই রায়কে স্থানীয় সম্প্রদায় এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো “ন্যায়ের জয়” হিসেবে উল্লেখ করেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) (সিপিআই(এম)), এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি করে আসছে। এই রায় তাঁদের সেই পরিকল্পনায় ধাক্কা দিয়েছে।

বিচার বিভাগ সাংবিধানিক (high-court) মূল্যবোধ রক্ষা করেছে।” সিপিআই(এম) নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “ওবিসি তালিকায় এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ অন্তর্ভুক্তি সামাজিক ন্যায়ের পরিপন্থী। আমরা আদালতের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করি। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এখনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।

তবে, দলের একাংশের নেতারা দাবি করেছেন, এই তালিকা সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং এটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার প্রয়াস ছিল। তাঁরা আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছেন।

ওবিসি তালিকার ইতিহাস

পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি তালিকা প্রণয়নের দায়িত্ব রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ কমিশনের। এই কমিশন সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের তালিকা প্রস্তুত করে এবং সরকারকে সুপারিশ পেশ করে(high-court)। কিন্তু সম্প্রতি নতুন তালিকায় ৭৬টি মুসলিম শ্রেণির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন, এই তালিকা তৈরির সময় স্বচ্ছ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। ঐতিহাসিকভাবে পিছিয়ে থাকা হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

Advertisements

২০১০ সালের আগে ওবিসি তালিকায় মুসলিম শ্রেণির সংখ্যা সীমিত ছিল। তবে, তৃণমূল সরকারের আমলে এই তালিকায় মুসলিম শ্রেণির সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালে রাজ্য সরকার ৪৯টি মুসলিম শ্রেণিকে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, যা তখন বিতর্কের জন্ম দেয়। এবারের ৭৬টি শ্রেণির অন্তর্ভুক্তি এই প্রক্রিয়াকে আরও বিতর্কিত করে তুলেছে।

সামাজিক প্রভাব

এই স্থগিতাদেশের ফলে রাজ্যের ওবিসি (high-court) সংরক্ষণ নীতির উপর সাময়িক প্রভাব পড়তে পারে। অনেকে মনে করছেন, এই রায় সামাজিক ন্যায়ের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ঐতিহাসিকভাবে পিছিয়ে থাকা হিন্দু ও অ-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই রায় স্বস্তি এনেছে। তবে, মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে, তাঁরা মনে করছেন এটি তাঁদের সাংবিধানিক অধিকারের উপর আঘাত।

আইনের শাসনের জয়

কলকাতা হাইকোর্টের (high-court) এই রায়কে অনেকে আইনের জয় হিসেবে দেখছেন। বিচার বিভাগের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য সংবিধানের অপব্যবহার করা যায় না। এই রায় রাজ্য সরকারকে তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করবে এবং ভবিষ্যতে আরও স্বচ্ছ ও ন্যায্য প্রক্রিয়া অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেবে।

বিরাট-রোহিত নন, টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম ২০০০ রানের তালিকায় ভারতের ছয় কিংবদন্তি

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

এই স্থগিতাদেশের পর তৃণমূল সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি রয়েছে। সরকার এই রায়ের (high-court) বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করতে পারে। তবে, আদালতের নির্দেশ অনুসারে, নতুন তালিকার বৈধতা যাচাইয়ের জন্য একটি বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। এই তদন্তে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপট বিশ্লেষণ করে সঠিকভাবে যোগ্য শ্রেণিগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে।

কলকাতা হাইকোর্টের (high-court) এই রায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও সামাজিক কাঠামোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সংরক্ষণ নীতি রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য অপব্যবহার করা যাবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপর এখন চাপ বাড়বে যে, তাঁরা সংবিধানের আলোকে ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে ওবিসি তালিকা প্রণয়ন করুক। এই রায় শুধু সামাজিক ন্যায়ের পথেই নয়, রাজ্যের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকেও একটি নতুন দিশা দেখাবে।